স্যামুয়েল বদ্রিকে সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেট নিয়ে বেশ বিরক্তই মনে হলো। অ্যান্টিগায় আসার পথে বার্বাডোজ বিমানবন্দরে উইকেট প্রসঙ্গে আলাপ উঠতেই ‘রাবিশ’ শব্দটা ব্যবহার করলেন সাবেক ক্যারিবীয় লেগ স্পিনার। তবে তাঁর অনুমান, অ্যান্টিগার উইকেট ভিন্ন হবে। এক্সট্রা বাউন্স থাকবে, ব্যাটে বল ভালো আসবে।
ঠিক একই কথা বললেন স্যার কার্টলি অ্যামব্রোসও, অ্যান্টিগার উইকেটে বাড়তি বাউন্স থাকবে, ব্যাটেও বল ভালো আসবে। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে এ দ্বীপে ঢুকতেই ওল্ড পারহাম রোডের কেএফসিতে গত সোমবার বিকেলে কন্যাকে নিয়ে এসেছেন খাবার কিনতে। সেখানেই কয়েকজন বাংলাদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে নাতিদীর্ঘ আলাপচারিতা হয়ে গেল তাঁর। সেই আলাপনে অবধারিতভাবে এল উইকেট। অ্যামব্রোস অ্যান্টিগার উইকেটে পেসারদের হাসি দেখতে পাচ্ছেন, ‘বাংলাদেশের পেস বোলাররা কিংবা দল হিসেবে সুপার এইটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবে। কারণ, পেস বোলারদের জন্য এটা দারুণ এক জায়গা। স্বাভাবিকভাবেই এখানকার উইকেটগুলো বেশির ভাগই পেসারদের জন্য।’
পরিসংখ্যান বলছে, অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম খুব একটা রানপ্রসবা নয়। গত ১৪ বছরে এখানে হওয়া কোনো টি-টোয়েন্টিতেই ২০০ রানের স্কোর দেখা যায়নি। এবার গ্রুপ পর্বেও তেমন রান দেখা যায়নি। অবশ্য বেশির ভাগ সহযোগী দলের ম্যাচ ছিল এখানে। শেষ আটের লড়াইয়ে কেমন রান ওঠে, সেটিই দেখার। তবে বাংলাদেশ কিন্তু সেন্ট ভিনসেন্টের ওই ধরনের উইকেট ভীষণ পছন্দ করেছে! দলের এক সিনিয়র সদস্য সেন্ট ভিনসেন্টে থাকতে বলছিলেন, ‘আমাদের কাছে এমন উইকেটই ভালো।’
ব্যাটারদের সংগ্রাম করতে হলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা বোলিংয়ে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার দারুণ সুযোগ মেলে সেন্ট ভিনসেন্টের মতো মন্থর, টার্নিং উইকেটে। গ্রুপ পর্বে বিশ্বকাপের উইকেট নিয়ে হয়েছে প্রচুর সমালোচনা। বড় রানের খেলা খুব একটা দেখা যায়নি গ্রুপ পর্বে। শেষ আটের লড়াইয়ে ব্যাটারদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা আইসিসি অবশ্যই করবে। তবে অ্যান্টিগায় এসে ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দল ভালোভাবে উইকেট দেখতে পারেনি।
গত পরশু সকালে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল দ্বীপের প্রাণকেন্দ্র সেন্ট জোনসের রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডে। সেই অনুশীলন বাতিল হয় বৃষ্টির বাধায়। বিকেলে মূল ভেন্যু স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ফিল্ডিং অনুশীলন করতে গেলেও তখন উইকেট ছিল কাভারে ঢাকা। সেটা আর উন্মোচনই করা হয়নি। আর কাল ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ অনুশীলন করেছে কুলিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, মূল ভেন্যুতে তখন চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা-যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ। বাংলাদেশকে তাই উইকেট চিনতে হচ্ছে গ্রাউন্ডসম্যানসহ নানা জায়গা থেকে প্রাপ্ত তথ্য, একই মাঠে হওয়া গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ আর অতীত অভিজ্ঞতা থেকে। এখানে ২০০৭ বিশ্বকাপের দুটি ওয়ানডে ম্যাচ আর ২০১৮ ও ২০২২ সালে দুটি টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। প্রতিটিতেই অবশ্য বড় ব্যবধানের পরাজয় সঙ্গী তাদের।
সেরা আটের লড়াই শেষে সেমিফাইনালে উঠতে যাচ্ছে কোন চার দল? এ প্রশ্নে অ্যামব্রোসের যথেষ্ট কূটনৈতিক জবাব, ‘উত্তর দিতে এটা কঠিন একটা প্রশ্ন। প্রেডিকশন করা কঠিন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তো প্রেডিকশনই করা যায় না। যেকোনো দিন যেকোনো দল যে কাউকে হারাতে পারে। সেমিফাইনালে কারা যাবে, সেটা বলা কঠিন।’
অনুমান করতে না পারলেও অ্যামব্রোস সেরা আট দলের সবারই সমান সুযোগ দেখেন সেমিতে ওঠার। সেই সম্ভাবনায় রাখছেন বাংলাদেশকেও, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই (বাংলাদেশ সেমিতে যেতে পারবে)। সেমিফাইনালে যেতে সব দলেরই সমান সুযোগ রয়েছে। এটাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট।’