চলতি মৌসুমে আমনের আবাদ নিয়ে চাষিদের চিন্তার শেষ নেই। আবাদ করতে গিয়ে শুধু খরচ আর খরচ। এবার যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এর প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির কারণে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন মাঠের আমন ধানের গাছ হেলে পড়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, যেসব ধানের শিষ বের হয়নি ও দানা নরম সেই ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
আমন চাষি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমার ৫ বিঘা জমিতে ধান রয়েছে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট দমকা হাওয়ায় ৩ বিঘার ধান হেলে পড়েছে। ধানের শিষে যে দানা রয়েছে, তা এখনো শক্ত হয়নি। অনেক ধান চিটা হয়ে যাবে। আর যে ফলন হওয়ার কথা ছিল তাও কমে যাবে। বিঘাপ্রতি ১৮-২০ মণ ফলন হয়। কিন্তু হেলে পড়ায় ৫ মণ কমে যাবে।’
মটমুড়া গ্রামের আমন চাষি বাবুল হোসেন বলেন, ‘আমনে গোড়া পচা ও মাজরা পোকার আক্রমণ কমেছে। একটু স্বস্তিতে ছিলাম। কিন্তু ধান পড়ে যাওয়ায় তো কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আমার ধানের দানা শক্ত হয়ে গেছে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে যে ক্ষতি হবে, তাই-তো অনেক। বর্তমানে আবাদ করা অনেক ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।’
চক কল্যাণপুর গ্রামের আমন চাষি আকরামুল হক জানান, চলতি বছর অনাবৃষ্টির কারণে আমন চাষ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা পোহাতে হচ্ছে। একদিন পরপর ধানে সেচ দিতে হচ্ছে। সার, ডিজেল, কীটনাশকসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাই ধান চাষ করতে গিয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার সিত্রাং এর প্রভাবে সৃষ্ট দমকা হাওয়ায় ধান পড়ে গেছে আর এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেলে ফলনও কমে যাবে। তাঁর ১ বিঘার ধান পড়ে গেছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট দমকা হাওয়ায় পড়ে যাওয়া যেসব ধানের দানা শক্ত হয়ে গেছে, সে ধানের ক্ষতি হবে না। তবে যে সব ধানের শিষ বের হচ্ছে এবং দানা এখনো শক্ত হয়নি সেই ধানের একটু ক্ষতি হয়ে যাবে। তবে কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
লাভলী খাতুন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৩ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।
কেশবপুরে ঘের ও পল্লী বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষতি: যশোরের কেশবপুরে সিত্রাংয়ের প্রভাবে ফসলসহ মাছের ঘের ও পল্লী বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ায় অন্ধকারে রাত কাটাতে হয়েছে বাসিন্দাদের। এদিকে কপোতাক্ষ ও হরিহর নদে ৫ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হওয়ায় কৃষকেরা রয়েছেন আতঙ্কে।
উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মুনজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ইউনিয়নের কাটাখালী, বিল খুকশিয়ার বিলে মাছের ঘেরের বেড়িতে ধসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ওই সমস্ত বেড়িতে লাগানো সিম, বরবটি ও মিষ্টি কুমড়াগাছ নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে ২২০ হেক্টর সরিষা, ৩০০ হেক্টর সবজি, ১ হাজার হেক্টর ধান, ১০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ে গাছ পড়ে প্রায় ১০০ স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০টি মিটার ও ৫টি ট্রান্সফরমার।