দৃষ্টি যত দূর যায় ততটুকুতে কেবল অথই পানি। কোথাও কোথাও কচুরিপানার ফুল গোধূলির আলোর সঙ্গে মিলে মিশে একাকার। পুরো বছর জুড়ে থাকে পানকৌড়ির আনাগোনা। জীবিকার তাগিদে বের হওয়া জেলেদের নৌকা থেকে ভেসে আসে লোকগানের শ্রুতিমধুর সুর। বর্ষায় এ বিলের রূপ, যৌবন আর লাবণ্য কয়েক হাজার গুন বেড়ে উঠে। এটিই বেলাই বিলের নিত্যদিনের চিত্র।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে অবস্থিত বেলাই বিল প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে এক ভিন্নরূপ ধারণ করে। বিলের বুক চিরে বয়ে যাওয়া তুমলিয়া মোড়-আওড়াখালি রাস্তাটিকে ঘিরে শুরু হয় পর্যটকদের আনাগোনা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসুরা নৌকায় করে বিল দেখতে চলে আসে। ঢাকা শহরের সন্নিকটে হওয়ায় শহুরের ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে একটু বিনোদনের আশায় পুরো পরিবার নিয়ে অনেকেই চলে আসেন এ বিলে। সারা দিন ঘোরাঘুরির পাশাপাশি থাকে বিল থেকে জেলেদের ধরে আনা তাজা সুস্বাদু মাছে দুপুরের ভোজ।
অপরদিকে, বিলের স্বচ্ছ পানিতে রং ছড়াতে ফুটে থাকে জাতীয় ফুল শাপলা। পুরো বিলের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে শাপলা ফুলে পরিপূর্ণ। বর্ষা মৌসুমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশ এই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিল থেকে চলে শাপলা সংগ্রহের কাজ। তারপর তা রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে চলে যায় বিক্রির উদ্দেশ্যে। এভাবেই এ অঞ্চলের মানুষ উপকারভোগী হয়ে বেঁচে আছে বিল বেলাইয়ের বুকে।
শীত মৌসুমে বিল পর্যটক আসেন অতিথি পাখি দেখতে। এ সময় বেলাই বিলে পর্যটকের ঢল নামে। বর্তমানে বেলাই বিলে অতিথি পাখির আগমন শুরু হয়েছে। অতিথি পাখি দেখতে ঘুরে আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বেলাই বিলে। গোধূলি বেলায় সূর্যের সোনালি আলোয় বিলের পানিতে মিলেমিশে অঙ্কন করে এক দারুণ চিত্র। সারি সারি অতিথি পাখিদের নীড়ে ফেরা, মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ঝাঁক এসব দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন হাজারো মানুষ।
বেলাই বিলে ঘুরতে আসা পর্যটক মো. আজহার উদ্দিন বলেন, ‘আমি ঢাকার গুলশানে থাকি। ইউটিউবে এ বিলের সৌন্দর্য দেখেছি। সেই থেকে এখানে আসার পরিকল্পনা ছিল। আমি এখানে এসে মুগ্ধ হয়েছি। মোবাইলে যতটা দেখেছি বাস্তবে তা হাজার গুণ বেশি সুন্দর। আমি সকলকে আহ্বান করব যেন সবাই বিলটি দেখতে আসেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান বলেন, বিলটি অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। এ সৌন্দর্য রক্ষায় স্থানীয়দের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। তাই তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রাকৃতিক ভূমি রক্ষা এবং সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করতে হবে।