হোম > পরিবেশ

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাব: ‘আমরা এবার মাঠেই মাডার’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

মাঠ তলিয়ে সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বৃষ্টির পানি। গতকাল সকালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খড়িয়াকান্দি এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে চরম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও খামার, ভেসে গেছে পুকুর। নুয়ে পড়েছে বেশির ভাগ জমির ধান। সব মিলিয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

নুয়ে পড়েছে ৮০ ভাগ ধান

গতকাল সকালে রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার দরগাপাড়া গ্রামে কথা হয় কৃষক জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। নিজের জমির পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘এত বর্ষণ জীবনেও দেখিনি। কান্দরে ধানের ভুঁইয়ের ভেতর দিয়্যা পানির সুত বহিছে। মাঠের ৮০ ভাগ ধান শুয়ে পড়েছে। এই ধান তুইলতে লোকও পাওয়া যাবে না। কারণ, সবাইকেই তো ধান তুইলতে হবে। একসাথে এত লোক পাওয়া যাবে কুণ্ঠে। আমরা এবার মাঠেই মাডার।’

সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষক জহিরুল ইসলামের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) তথ্যমতে, গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সারা দিন গোদাগাড়ীতে ২৩৬ ও তানোরে ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলি মাঠ উঁচুনিচু সিঁড়ির মতো। দুপাশ উঁচু, মাঝের কিছু অংশ তুলনামূলক নিচু হলে সেই অংশটিকে ‘কান্দর’ বলে থাকেন লোকজন। বরেন্দ্র অঞ্চলের এসব কান্দরগুলো তলিয়ে গিয়ে বিলের মতো হয়ে গেছে। এসব জমিতে আছে আমন ধান। কখনো কখনো বিলের ধান ডুবলেও সাধারণত কান্দর কখনো ডোবে না। কিন্তু এবার শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সবই তলিয়েছে।

এ বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন বিলে অপরিকল্পিতভাবে খনন করা পুকুরগুলো তলিয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তাই বিল ও খাড়িগুলোতে মানুষ দল বেঁধে মাছ ধরতে নেমেছে। গতকাল রোববার সকালে পবা উপজেলার শুলিতলা ভিমারডাইং এলাকায় জোয়াখালি নদীর স্রোত দক্ষিণে যাচ্ছে দেখিয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এই নদীর স্রোত সব সময় উত্তর দিকে যায়। কিন্তু উত্তরেই এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে পানি যাচ্ছে দক্ষিণে। এটাকে বলা হয় উত্তরা পেলি। এই উত্তরা পেলি আমি আমার জীবনে এবার দ্বিতীয়বার দেখছি।’

বৃষ্টির পানিতে বিলের ভেতর থাকা পুকুরগুলো ভেসে গেছে। এতে মৎস্যচাষিদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এদিকে বৃষ্টিতে পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ও বাগমারায় পানবরজেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জানতে চাইলে গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদ জানান, মোট ৪৬৩ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রিশিকুল ইউনিয়নের ৭১টি মাটির বাড়ি ধসে গেছে। পাকড়ি ইউনিয়নে আরও কয়েকটি বাড়ি ভেঙে গেছে। তবে বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি বলেই দাবি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘আমরা সামগ্রিকভাবে ৫০০ হেক্টর ধানের ক্ষতির একটা প্রতিবেদন দিচ্ছি। শুয়ে পড়লেই কিন্তু ক্ষতি হবে না। আমি মাঠেই আছি, দেখছি।’

মৎস্যচাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও জানাতে পারেননি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু উপজেলা থেকে পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। এটা হয়েছে অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে। একই কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের মতো উঁচু জমিও এই সময়ে তলিয়ে গেছে। মাছচাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের একটা প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আমি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের বলেছি।’

ঋণের দুশ্চিন্তায় দুটি পরিবার

এসএসসি পাস করে সংসারের অভাব-অনটনে লেখাপড়া বাদ দেন রাজশাহীর দুর্গাপুরের কালীগঞ্জ গ্রামের রাব্বি হাসান (২০)। পরে বাড়ির পাশেই শুরু করেন পোলট্রি মুরগির খামার। দুই বছর লাভ-লোকসান হলেও এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে একেবারে পথে বসে গেছেন তিনি। শুক্রবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাতে হঠাৎ করে হাঁটুপানি জমে খামারে। এতে মারা যায় প্রায় তাঁর ১ হাজার ৫০০ মুরগি। যার একেকটির ওজন ৭০০-৮০০ গ্রাম।

অপরদিকে একই দিনে উপজেলার আলীপুর গ্রামে সজল আহম্মেদের খামারের একই অবস্থা। রাতে তাঁর খামার তলিয়ে মারা ১ হাজার মুরগি। ফলে দুই পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। এই অবস্থায় এনজিওর টাকা পরিশোধ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছে দুই পরিবার। খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস তাঁর কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি খামার পরিদর্শন করেছেন।

ধানগাছ পচে নষ্টের শঙ্কা

লালমনিরহাট ও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে পাকা-আধা পাকা আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়ায় ফসলহানির শঙ্কা করছেন কৃষকেরা। কৃষকেরা জানান, নুয়ে পড়া পাকা ধান কেটে নিলেও আধা পাকা ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। আগাম জাতের আমন ধান কাটা শুরু হলেও পুরোদমে ধান মাড়াই শুরু হতে আরও ২০-২৫ দিন লাগবে। এ সময় বৃষ্টি আর বাতাসে নষ্ট হলো উঠতি আমন ধান। এমন গবাদিপশুর খাদ্য ধানগাছ তথা খড় পচে নষ্টের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ফলে ঋণ পরিশোধ আর উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, পরিবারের খাবার জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্ষুদ্র চাষিরা।

৫৫ হেক্টর আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত

শেরপুরে গত তিন দিনের বৃষ্টিপাত ও বৈরী আবহাওয়ায় উঠতি আমন ধান ও শীতকালীন সবজি খেতের চরম ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, আমন ধান, সবজি ও গোল আলু মিলে মোট ৫৫ হেক্টর জমির আবাদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে। তবে কৃষকদের দাবি, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।

রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আগাম জাতের ধান ও রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকেরা বলেন, অনেকে পাকা ধান কেটে জমিতে শুকানোর জন্য রেখেছিলেন, সেগুলো পানিতে নষ্ট হচ্ছে। ধুরাইল ইউনিয়নের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘শেষ সময়ে আইসা বৃষ্টি অইবো ভাববার পারি নাই। যেইদিন ধান কাইট্টা খেতে রাখছি, হেইদিন থাইকা বৃষ্টি শুরু অইছে। বৃষ্টি না কমায় খেত থাইকা ধান উঠাইবার পারছি না। সব আল্লাহর ইচ্ছা।’

শীতের প্রকোপ বাড়ছে: ৭ জেলায় ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ, থাকবে কত দিন

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা, সতর্ক থাকতে পারেন যেভাবে

মেঘলা ঢাকার আকাশ, কুয়াশার দেখা মিলতে পারে

শীতে জবুথবু, কুয়াশায় দুর্ঘটনা

বায়ুদূষণ বেড়েছে ঢাকায়, বিপর্যস্ত কায়রো

ঢাকার তাপমাত্রা কমবে

বায়ু দূষণে তৃতীয় স্থানে ঢাকা, শীর্ষে দিল্লি

ঢাকায় সকালে তাপমাত্রা আবারও ১৬ ডিগ্রির ঘরে

সকালে সূর্যের দেখা নেই, কুয়াশাচ্ছন্ন ঢাকার আকাশ

ঢাকায় বেড়েছে বায়ুদূষণ, দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় কাবুল