ঢাকার বায়ুমানে কিঞ্চিৎ উন্নতি হয়েছে। সাধারণত, বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় বাতাসে দূষককণার উপস্থিতির পরিমাণ কিছুটা কম থাকে। বিগত কয়েক দিনের প্রায় ধারাবাহিক বৃষ্টির কারণে ঢাকার বাতাসের উন্নতি হয়ে থাকতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটের রেকর্ড অনুসারে ঢাকার বায়ুমান ৮৬, যা সহনীয় বাতাসের নির্দেশক।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান সূচক পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্যমতে, আজ ঢাকার বায়ুমান ৮৬। তবে বায়ুমানে উন্নতি হলেও বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবনতি হয়েছে। গতকাল বুধবার ৯৬ বায়ুমান নিয়ে ঢাকার অবস্থান যেখানে ছিল ১৮তম, আজ সেখানে ঢাকার অবস্থান ১৭তম।
আজ বায়ুমানে অবনতির দিক থেকে শীর্ষে থাকা পাঁচ শহর হলো যথাক্রমে—মিসরের রাজধানী কায়রো (বায়ুমান ২৩৮), গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী কিনশাসা (১৭২), সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই (১৬৫), চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো (১৬০) এবং কাতারের রাজধানী দোহা (১৩৯)।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ-এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে—গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।