অতীতে বাংলাদেশে প্রায় ১৮৮ প্রজাতির অর্কিড পাওয়া যেত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে বিগত কয়েক দশকে অন্তত ৩২ প্রজাতির অর্কিড দেশ থেকে বিলীন হয়ে গেছে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধ থেকে এই কথা জানা গেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হুদার ২৩ বছরের গবেষণার ফল এ নিবন্ধ। মানবজীবনে অর্কিডের ভেষজ, কৃষিজ এবং শিল্পমূল্য বিবেচনার ভিত্তিতে গবেষক বলছেন, এই হারে অর্কিড বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই আশঙ্কাজনক।
গবেষণায় অধ্যাপক কামরুল হুদা এতগুলো অর্কিড প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে প্রধান দুটি কারণ নির্দেশ করেছেন। প্রথমটি হলো—এসব অর্কিডের জন্মস্থল ধ্বংসকরণ এবং দ্বিতীয়টি হলো—মাত্রাতিরিক্ত আবাদ। তবে ঠিক কোনো সময়সীমার মধ্যে অর্কিড প্রজাতিগুলো বিলুপ্ত হয়েছে তা গবেষণায় নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে সাধারণভাবে বলা হয়েছে যে, একুশ শতক পড়ার আগেই অর্থাৎ গত শতকেই অধিকাংশ অর্কিড বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
অর্কিডের কেবল ভেষজ, কৃষিজ এবং শিল্পমূল্যই নেই, এর বাস্তুতান্ত্রিক মূল্যও রয়েছে। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাজী মোশারফ হোসাইন বলেন, ‘কোনো একটি বনে অর্কিডের উপস্থিতির মানে হলো—সেই বনের বাস্তুতন্ত্র স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশিরা এখনো অর্কিডকে কেবল সৌন্দর্যবর্ধনের উপকরণ হিসেবেই ভাবে।’
অর্কিডের অর্থনৈতিক মূল্যও রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফুল বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী এস এম শরিফুজ্জামান বলেন, ‘অর্কিডের পরিবেশগত উপকারিতার পাশাপাশি তা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। কিন্তু অর্কিড চাষ এখনো মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় নয়। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি। অর্কিডের বংশবৃদ্ধির জন্য গবেষণা চলছে, তবে বেশির ভাগ গবেষণা ব্যক্তিগত পর্যায়ে।’
কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই হুমকির মুখে অর্কিড। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) দেওয়া তথ্যানুসারে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দেড় হাজারেরও বেশি অর্কিড প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকির মুখে রয়েছে।