কয়েক দিন ধরেই ঘূর্ণিঝড় রিমালের কেন্দ্র ভাগ (আই বা চোখ) বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার খেপুপাড়া দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করার কথা বলা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন স্যাটেলাইট ও পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যাচ্ছে, ঝড়ের কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ, সুন্দরবন (ভারতীয় অংশ), কলকাতা হয়ে দেশের খুলনা, মেহেরপুর–কুষ্টিয়া অঞ্চল দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করবে। এ ক্ষেত্রে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরে বেশি প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের চারপাশের প্রভাব পড়বে পটুয়াখালী থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত।
ঘূর্ণিঝড়ে রিমালের সর্বশেষ হালনাগাদের বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. শামীম হাসান ভুইয়া জানান, উত্তর–পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ–পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
রিমালের কেন্দ্র কোন দিক দিয়ে অতিক্রম করবে সে ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা কিন্তু মোংলার কাছে সাগরদ্বীপ দিয়ে খেপুপাড়ার মধ্যে যেকোনো জায়গা দিয়ে (রিমাল) পার হবে এমনটা বলেছি। একটা ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র বরাবর উপকূল অতিক্রম করলে তাকে বলা হয় উপকূল অতিক্রম।’
ড. বিশ্বজিৎ নাথ জানান, রিমাল রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ পার করবে। পুরো রাত এটি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হয়ে অগ্রসর হবে। এ সময় এর গতিবেগ ১৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকতে পারে। এই অঞ্চলে স্থলভাগের তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে সে এই শক্তি পাবে। আর কেন্দ্রের ডান অংশ তাণ্ডব চালাবে সাতক্ষীরা ও শ্যামনগর অংশে। আর রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে এটি কলকাতা পার হবে। এরপর কুষ্টিয়া, মেহেরপুর হয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে পারে আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে। এ সময় এর গতিবেগ থাকতে পারে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটারের মধ্যে। তবে যখন এটি স্থলে প্রবেশ করবে তখন থেকেই এর প্রভাব বাংলাদেশের উপকূলগুলোতে পড়বে। এরই মধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এই আবহাওয়া গবেষক আরও বলেন, ‘ফরিদপুর, পাবনা ও রাজশাহী অঞ্চল রিমালের তাণ্ডব মোকাবিলা করবে। ২৮ তারিখ পুরোটা সময় অবস্থান করে এটি মিলিয়ে যাবে।’
রিমালের কারণে ১০ থেকে ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে জানিয়ে বিশ্বজিৎ নাথ বলেন, ‘এটি বাংলাদেশে আঘাত করার সময় এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ১২০ থেকে ১২৫ কিলোমিটার থাকতে পারে। কিছু সময়ের জন্য ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। সাতক্ষীরা ও শ্যামনগর রিমালের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের হলদিবাড়ি দিয়ে রিমালের কেন্দ্র অতিক্রম করার কথা। এটির নিচের অংশ যখন স্থলভাগে ঢুকবে তখন এর গতিবেগ বেশি হবে। এটি তখন সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে তাণ্ডব চালাবে। আর রিমালের সমস্ত অংশ যখন স্থলভাগ অতিক্রম করতে থাকবে তখন এর গতি কমতে থাকবে। কলকাতা হয়ে এটি যশোর, খুলনা এই অংশ দিয়ে বাংলাদেশের ওপরের দিকে যাবে।