বিশ্বের ১২৭টি নগরীর মধ্যে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আজ বুধবার সকাল ৯টার দিকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এদিন ঢাকার আগে কেবল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি ছিল, যা বায়ুর মানের দিক থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’।
আইকিউএয়ার কর্তৃক প্রকাশিত লাইভ সিটি র্যাঙ্কিংয়ের তথ্যানুযায়ী, আজ সকাল ৯টায় বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক দূষিত শহরগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোর অবস্থান উদ্বেগজনক। র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি, যেখানে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ২৬৭, যা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। এর ঠিক পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, স্কোর ২২৬ এবং ক্যাটাগরি ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’। তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতের কলকাতার একিউআই স্কোর ২১১।
এ ছাড়া শীর্ষ দশে থাকা অন্য শহরগুলো যথাক্রমে ইরানের রাজধানী বাগদাদ (২০২), পাকিস্তানের লাহোর (১৯৮), ইরানের তেহরান (১৮২), উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (১৮০), ভারতের মুম্বাই (১৭২), পাকিস্তানের করাচি (১৬৮) এবং ভিয়েতনামের হেনয় (১৬৫) ‘অস্বাস্থ্যকর’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
আজ সকালে ঢাকার সাতটি নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুর মান বিশেষভাবে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এই স্থানগুলো হলো ইস্টার্ন হাউজিং, দক্ষিণ পল্লবী, বেজ এজ ওয়াটার; বেচারাম দেউড়ি, কল্যাণপুর, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং গোড়ান। এসব রেকর্ড এলাকায় বায়ুমান ১৭৫ থেকে ২৬৫।
সকালে ঢাকার বায়ুর মান (একিউআই) রেকর্ড করা হয়েছে ২২৫, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। বাতাসের মান ২০০-এর বেশি হলেই সেটিকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। অন্যদিকে নয়াদিল্লির বায়ুর মান ছিল ৪০৫, যা ৩০০-এর বেশি হওয়ায় ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘বিপজ্জনক’ ক্যাটাগরিতে পড়ে।
দীর্ঘদিন ধরে চলা এই বায়ুদূষণের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঢাকা ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষের দিকে থাকছে এবং বায়ুর মান খুব অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্তদের জন্য ঘরের বাইরে থাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২ দশমিক ৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলা এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।
বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়
অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।
সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।
যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।
ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।