সুন্দরবনের পরেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রামসার সাইট খ্যাত মিঠাপানির জলাভূমি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর। নিষিদ্ধ কারেন্ট জালে মাছ শিকার, ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি হত্যা, হিজল-করছ গাছ কেটে উজাড়, ইঞ্জিন চালিত নৌকায় অবাধ বিচরণ ও যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা এসব নানান কারণে হাওরের জীববৈচিত্র্য দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে।
স্থানীয়দের দাবি, টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় অচিরেই সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো পর্যটক ভাড়ায় চালিত ইঞ্জিন নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করেন। হাওরে গিয়ে পর্যটকেরা কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পানির বোতল, ওয়ান টাইম প্লাস্টিক গ্লাস, চিপস-চানাচুরের প্যাকেটসহ অসংখ্য প্লাস্টিক সামগ্রী নির্দ্বিধায় হাওরের পানিতে ফেলছেন। অপরদিকে টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামের লোকজন রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরছেন, কেউ আবার জ্বালানির জন্য হিজল-করছ গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন, অনেকেই আবার শীতকালে আসা অতিথি পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এসব কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য।
টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা শিক্ষক নীহার রঞ্জন তালুকদার জানান, ছোট বেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরে অনেক বড় বড় মাছ দেখতাম, শীতকালে পাখির কলতানে ঘুম ভাঙলেও বর্তমানে এসবের কিছুই এখন নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টাঙ্গুয়ার হাওরের এক জেলে জানান, অন্য কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় আমরা টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ ধরি, শীতের সময় পাখি শিকার করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি।
তাহিরপুর উপজেলা হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম সারোয়ার লিটন বলেন, 'নানান কারণে দিন দিন টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।'