গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তাঁর সিনেমায় প্রথমবার একক নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন ওমর সানী। নির্মাতাকে নিজের ওস্তাদ মানেন তিনি। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন ওমর সানী।
একক নায়ক হিসেবে আমার প্রথম সিনেমা ‘চাঁদের আলো’। সেই সিনেমার পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম স্যার। তিনি বরেণ্য পরিচালক, অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। আমার ওস্তাদ, আমার পিতৃতুল্য। শেখ নজরুল ইসলাম নিজেই এক ইতিহাস। আমার মতো এক অধম ওমর সানীকে আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। পিতার মতো একজনকে হারালাম। মনে হচ্ছে আবার এতিম হয়ে গেছি। বুকের ভেতর খালি খালি লাগছে।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের কথা। প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আমাকে দিয়ে সিনেমা হবে না। আমি তখন দারাশিকো ভাইয়ের ‘প্রেমের বাঁশি’ নামের একটি সিনেমার হিরো হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি আর হলো না। তখন দারাশিকো ভাই বললেন, একজন একটা সিনেমা বানাচ্ছেন, দেখি তোমার জন্য কিছু করা যায় কি না। উনি নজরুল স্যারকে ফোন করে অফিসে আনালেন। আমাকে দেখিয়ে বললেন, আপনি না নতুন ছেলে খুঁজছেন? এই ছেলেটাকে দেখেন। আমাকে দেখে নজরুল স্যার বললেন, ‘এই ছেলে একটু দাঁড়াও।’ ভালো করে আমাকে দেখে বললেন, ‘কালকে তুমি আমার বাসায় এসো।’
পরদিন তাঁর বাসায় গিয়ে দেখি সেখানে রাজীব ভাই, মিজু ভাই, এ টি এম শামসুজ্জামান ভাইসহ অনেকে আছেন। নজরুল সাহেব আমাকে দেখিয়ে সবার মতামত জানতে চাইলেন। সবাই আমাকে দেখে সম্মতি দিলেন, আমি সিলেক্ট হলাম। চাঁদের আলো সিনেমাটাও বাম্পার হিট হলো। চাঁদের আলোর আগে আমি দুটো সিনেমায় অভিনয় করেছি। একটি নূর হোসেন বলাই সাহেবের ‘এই নিয়ে সংসার’, অন্যটি আফতাব খান টুলু ভাইয়ের ‘আমার জান’।
চাঁদের আলো ছাড়াও অনেক সিনেমা বানিয়েছেন শেখ নজরুল ইসলাম। একটা সময় ছদ্মনামেও সিনেমা বানিয়েছেন। নব্বইয়ের দশকে যে কয়েকজন পরিচালক আমাদের সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম আমার ওস্তাদ শেখ নজরুল ইসলাম।
নজরুল সাহেবের অসুস্থতার খবর আমাকে প্রথম জানিয়েছেন নির্মাতা গাজী মাহবুব ভাই। আমি তখন মালয়েশিয়ায়। দেশে ফিরে যখন তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যাই, তখন তিনি লাইফ সাপোর্টে। তাঁকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। চোখ ৫দিয়ে যেন অঝোরে পানি ঝরছিল। আমি তাঁকে স্পর্শ করলাম। তাঁর হাতটা ধরলাম। উনার ছেলে আমাকে বলল, ‘আংকেল আব্বু কিন্তু বুঝতে পারছে যে আপনি এসেছেন।’ আমার মনে হলো, উনি যেন আমার হাতটা ছাড়তে চাইছেন না। আমি তো তাঁর আরেক সন্তান। সবার কাছে অনুরোধ, আমার পিতৃতুল্য ওস্তাদের জন্য দোয়া করবেন।
একনজরে
শেখ নজরুল ইসলাম
চলচ্চিত্রে হাতেখড়ি
খান আতাউর রহমান ও জহির রায়হানের সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন।
প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র
‘চাবুক’ (১৯৭৪)
উল্লেখযোগ্য কাজ
‘নদের চাঁদ’ (১৯৭৯), ‘নতুন পৃথিবী’ (১৯৮৪), ‘বিধাতা’ (১৯৮৯), চাঁদের আলো (১৯৯২)
মৃত্যু
২২ নভেম্বর, ২০২৫