কনসার্টে কিংবা রেড কার্পেটে সব সময় হাস্যোজ্জ্বল তিনি। ঝলমলে হাসিতে ভরিয়ে দেন চারপাশ। সেই ম্যাডোনার জীবনেও ছিল অন্ধকার অধ্যায়। সম্প্রতি অন পারপাস উইথ জয় শেঠি পডকাস্টে এসে কুইন অব পপখ্যাত এই মার্কিন সংগীতশিল্পী জানালেন, একসময় জীবন তাঁর কাছে এতটাই অসহনীয় হয়ে উঠেছিল, আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন তিনি।
এ পডকাস্টে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নিজের জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় নিয়ে কথা বলেছেন ম্যাডোনা। পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে সেই কঠিন সময়টা কীভাবে পেরিয়ে এসেছেন তিনি, কীভাবে আধ্যাত্মিকতায় সঁপে দিয়েছেন নিজেকে; বিস্তারিত বলেছেন সবই।
২০০৮ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক গাই রিচির সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় ম্যাডোনার। ২০১৬ সালে এ দম্পতির ছেলে রোকোর বয়স যখন ১৬ বছর, তখন সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন শিল্পী। ছেলে রোকো চলে যায় বাবার সঙ্গে লন্ডনে থাকতে। ছেলের অভিভাবকত্ব ফিরে পেতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন ম্যাডোনা। ওই সময়টা খুবই কঠিন ছিল তাঁর জন্য।
ম্যাডোনা বলেন, ‘ছেলের অভিভাবকত্ব নিয়ে লড়াইয়ের সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক মুহূর্ত। কোনো আশা দেখতে পাচ্ছিলাম না। ওই সময় একাধিকবার এমন মুহূর্ত এসেছে, আমি নিজের হাত কেটে ফেলতে চেয়েছি, আত্মহত্যা করতে চেয়েছি।’ কুইন অব পপ আরও বলেন, ‘আমার সংসারজীবন সফল হয়নি। অনেকেরই হয় না। অনেক সময়ই আমরা ভুল মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু যখন আমার সন্তানকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল, কেউ যেন আমাকে মেরে ফেলতে চাইছে।’
ম্যাডোনার জীবনে যখন এত কিছু চলছে, তখন তিনি ব্যস্ত রেবেল হার্ট ট্যুর সংগীতসফরে। একদিকে পেশাগত জীবনের ব্যস্ততা, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনের জটিলতা—সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন ম্যাডোনা। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই ড্রেসিংরুমের মেঝেতে শুয়ে চিৎকার করে কাঁদতাম। প্রায় প্রতি রাতেই আমাকে কনসার্টের জন্য মঞ্চে উঠতে হতো। আমার মনে হতো, জীবনের জার্নি হয়তো শেষ হয়ে এসেছে। আর নিতে পারছিলাম না।’
ছোটবেলায় ম্যাডোনার মা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। মাতৃস্নেহ তিনি পাননি। তাই সন্তানের অভিভাবকত্ব হারানোর পর তাঁর মনে হতো, জীবন হয়তো আবার তাঁকে সেই সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ম্যাডোনা জানান, ওই ভয়াবহ দুঃসময়ে তাঁকে রক্ষা করেছে ধর্মীয় বিশ্বাস। ধীরে ধীরে ম্যাডোনা আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এখন তাই তাঁর উপলব্ধি, ‘আধ্যাত্মিক জীবনই সফল জীবন। যদি এ বিশ্বাস আমার মধ্যে না থাকত, তাহলে আজ আমি এখানে থাকতে পারতাম না।’