রাজধানীর তিনটি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ওয়াসার তিন দিনব্যাপী সচেতনতামূলক স্কুল ক্যাম্পেইন ‘পরিচ্ছন্ন নগর, সুস্থ জীবন’। ১০ থেকে ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এই ক্যাম্পেইন ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (ডিএসআইপি) আওতায় আয়োজন করা হয়।
এর উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে নিরাপদ পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা এবং পানি অপচয় রোধের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো।
ক্যাম্পেইনটি অনুষ্ঠিত হয় মানিকনগর মডেল হাইস্কুল, পোস্ট অফিস হাইস্কুল (মতিঝিল) এবং মতিঝিল বিটিসিএল হাইস্কুলে। এই স্কুলগুলো ডিএসআইপি প্রকল্পের প্রধান পাইপলাইন বা ট্রাংক মেইন এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত। রেড অরেঞ্জ লিমিটেডের সহায়তায় আয়োজিত এই কার্যক্রমে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
এই ক্যাম্পেইনে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় বিভিন্ন ইন্টার্যাকটিভ সেশন ও দলভিত্তিক কার্যক্রমে। সেখানে তাদের শেখানো হয় পানি সংরক্ষণ ও সঠিক পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব। এখানে পয়োশোধনাগার বা পয়োশোধনাগার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের ছোট মডেল ব্যবহার করে হাতেকলমে শেখার ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষার্থীরা স্টিকার ও অ্যাকটিভিটি শিট ব্যবহারের মাধ্যমে আরও পরিষ্কারভাবে প্রকল্পের কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএসআইপি প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সেলীম মিঞা। তিনি বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন এলাকায়, এমনকি স্কুলের আশপাশেও পাইপলাইন স্থাপনের জন্য সড়ক খননের কাজ চলছে। এতে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে, কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে আপনারা এর দীর্ঘমেয়াদি সুফল দেখতে পাবেন।’ বিশেষ অতিথি নির্বাহী প্রকৌশলী ইসরাফিল হোসেন আকন্দ বলেন, ‘ডিএসআইপি প্রকল্প সম্পন্ন হলে বুড়িগঙ্গা নদীসহ ঢাকার জলাশয়ের পানির মান অনেক উন্নত হবে। পরিষ্কার পানি মানেই একটি সুস্থ নগর।’
ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রকৌশলী রাহাত-উন-নবী ও জনাব মোসাদ্দেকুর রহমান। সেই সঙ্গে রেড অরেঞ্জ লিমিটেডের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্পের সিএসএফএস প্যাকেজের টিম লিডার অর্ণব চক্রবর্তী, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট তারেক মাহমুদ এবং পরিচালক (স্ট্র্যাটেজি) জান্নাতুল মুনিয়া।
রেড অরেঞ্জ লিমিটেডের প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইন্টার্যাকটিভ সেশন পরিচালনা করে। সেখানে ঢাকার স্যানিটেশন সমস্যা ও ডিএসআইপি প্রকল্প কীভাবে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে বোঝানো হয়, কীভাবে পয়োবর্জ্য সংগ্রহ, পরিশোধন করে আবারও তা পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক শিক্ষার্থীই প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা পানি সংরক্ষণ ও স্বাস্থ্যবিধির এই জ্ঞান নিজেদের পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেবে
শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, ঢাকা ওয়াসার প্রতিনিধিরা স্কুলের শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সেখানে ডিএসআইপি প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া আকর্ষণীয় এবং শিক্ষামূলক ফ্লায়ার ও ব্রশিওরের মাধ্যমে জানানো হয়, কীভাবে এই প্রকল্প ঢাকার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা আধুনিক করবে, দূষণ কমাবে এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে। শিক্ষক ও কর্মীরা এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁদের মতে, এটি শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং তরুণ প্রজন্মকে পরিচ্ছন্ন ঢাকার স্বপ্নে অনুপ্রাণিত করেছে।
তিন দিনব্যাপী আয়োজিত ‘পরিচ্ছন্ন নগর, সুস্থ জীবন’ ক্যাম্পেইনটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য হয়ে উঠেছিল শেখার ও ভাবনার এক নতুন প্ল্যাটফর্ম। পানি সংরক্ষণ, পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ নিয়ে সচেতনতা তৈরির এই উদ্যোগ প্রমাণ করেছে, পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ গড়তে স্কুলভিত্তিক এমন কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা কাজ করছে একটি পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই নগর গড়ার লক্ষ্যে, যেখানে নাগরিকেরা জানবে প্রতিটি ফোঁটা পানির মূল্য এবং দায়িত্বশীল ব্যবহারের গুরুত্ব।