সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও পরীক্ষা বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালনে অটল আছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশের শিক্ষকেরা। বরং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া চার শিক্ষক নেতাকে শোকজ করার পর আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। আগামীকাল বুধবার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘তালাবদ্ধ’ রাখার পাশাপাশি উপজেলা শিক্ষা অফিসের সামনে বিক্ষোভ করবেন তাঁরা।
তবে দুই দিন কর্মবিরতি পালনের পর শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরারের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন স্থগিত করেছেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। আগামীকাল থেকে রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন করায় দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিদ্যালয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের বাগ্বিতণ্ডায় জড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। তবে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ও সহায়ক কর্মচারীরা মিলে পরীক্ষা নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
চার দফা দাবিতে সারা দেশের ৭২১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা গতকাল সোমবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। আর প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ দাবি বাস্তবায়নে পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি পালন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে দেশের বেশির ভাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। যশোর জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক গাজী আনিছুর রহমান জানান, শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুস সালাম জানান, কর্মবিরতির কারণে বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে।
তবে দাবিদাওয়া নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষক নেতারা। বৈঠক থেকে বের হয়ে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানান সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির এক শীর্ষ নেতা।
তবে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর অনেক বিদ্যালয় বিচ্ছিন্নভাবে আজ পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছে। রাজধানীর টিকাটুলীর কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওবায়দুল হক জানান, আজ বুধবার সূচি অনুযায়ী যথারীতি পরীক্ষা হবে। গত দুই দিনের পরীক্ষার সূচি পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
কামরুন্নেছার পাশাপাশি রাজধানীর নারিন্দা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও আজ বুধবার থেকে যথারীতি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে দেশের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকৈলাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষকেরা অফিস কক্ষে অবস্থান করছেন। আর পুরো পরীক্ষার দায়িত্ব একাই পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। এতে পরীক্ষায় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান আজ বলেন, সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
চার শিক্ষক নেতাকে শোকজ
পরীক্ষায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের চার নেতাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। তাঁরা হলেন সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি, মো. শামছুদ্দীন মাসুদ, মো. আবুল কাশেম এবং শিক্ষক মো. মাহবুবার রহমান।
জানতে চাইলে শিক্ষক নেতা মো. শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, ‘তিন দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার আমরা বিদ্যালয়ে “তালাবদ্ধ” কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব। একই সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার প্রতিবাদে উপজেলা বা থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) অফিসের সামনে অবস্থান নেবেন শিক্ষকেরা।’