সংসারে আর্থিক বিভিন্ন টানাপোড়েনের মধ্যেও কখনো থেমে থাকেননি হুমায়রা খানম জেরীন। টিউশনি করেই তিনি নিজের পড়াশোনার খরচ চালান। তবু পিইসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত থাকেন, আর মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। এ যেন পরম যত্নে নিজেকে গড়ে তোলার এক নিখুঁত উদাহরণ।
জেরীনের শৈশব কেটেছে দেশের সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের বাহিরমাঠ গ্রামে। ছোটবেলা থেকে চঞ্চল, সংস্কৃতিপ্রিয় জেরীন কবিতা ও ছবি আঁকার প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। সংসারে উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি হলেন প্রবাসী বাবা, আর মা গৃহিণী হলেও তাঁর কঠোর পরিশ্রমে জেরীনসহ সবার পড়াশোনা চলছে।
শিক্ষার যাত্রা শুরু হয় নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে, যেখানে ২০১৩ সালে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন। ২০১৯ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি ছালেহ আহমদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং ২০২১ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এম এ কালাম সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ লাভ করেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।
শুধু পড়াশোনায় নয়, লেখালেখিতে ও জেরীনের রয়েছে অসাধারণ প্রতিভা। ২০২২ সাল থেকে তিনি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ফিচার ও কলাম লিখছেন। স্নাতক প্রথম বর্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক ও সহশিক্ষামূলক সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত। তিনি আজকের পত্রিকার তরুণদের সংগঠন পাঠকবন্ধুতে যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের সঙ্গে যুক্ত থেকে বিভিন্ন সময়ে ‘সেরা লেখক’ নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ছাড়া ২০২৫-২৬ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
জেরীন আরও বলেন, ‘আমার কাছে সংগঠন মানে মানুষের সেবা করা। যেকোনো সংগঠনের মাধ্যমে কাজ করে মানুষের কল্যাণ করা হলো আসল সার্থকতা। আমার সংগঠনের মাধ্যমে আমি দেশের মানুষকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’ তিনি বিশ্বাস করেন, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা কখনো মানুষের সৃষ্টিশীলতা, উদ্যম এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বাধা দিতে পারে না।
হুমায়রা খানম জেরীনের লক্ষ্য হলো মাঠপর্যায়ে, অর্থাৎ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দেশের মানুষের সেবা করা।