‘পরিবেশ’ শব্দটি এখন কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা স্বাস্থ্য—সব ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য আলোচ্য বিষয়। কিন্তু এই বোধ সঞ্চার করতে সময় লেগেছে অনেক, আর সেই বিলম্বই আজ পৃথিবীকে করেছে অসুস্থ। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস বিপুলেন্দু বসাক। লিখেছেন মো. আশিকুর রহমান
মানুষ এখন ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছে। মানুষ একা ভালো থাকতে পারে না; চারপাশ ভালো না থাকলে নিজের মঙ্গলও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই সামগ্রিক ভালো থাকার মূল চাবিকাঠি হলো পরিবেশ। উন্নত বিশ্ব যেখানে বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পরিবেশবিজ্ঞানের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিল, সেখানে আমাদের দেশে বিষয়টি গুরুত্ব পেতে আরও প্রায় অর্ধশতাব্দী লেগে গেছে। এই দীর্ঘ অপেক্ষা আমাদের পরিবেশ ও উন্নয়নের সূচকে মারাত্মক ক্ষতি ডেকে এনেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
এ দেশের পরিবেশবিজ্ঞান খুব পুরোনো কোনো বিষয় নয়। গত শতকের শেষ দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশে বিষয়টির একাডেমিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিভাগ চালু এবং ব্যক্তি পর্যায়ের চিন্তা থেকে পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা ও কর্মসূচি একটি সামগ্রিক রূপ নিতে শুরু করে।
২০১৬ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। এটি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে বুটেক্সেও একই নামে একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত টেক্সটাইল শিল্পের দূষণ ও এর প্রতিকার নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছে।
একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোনো একক শাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রকৃত অর্থে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি প্রফেশনাল অ্যাপ্রোচ। এই বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য দরকার পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, ভূগোল, অণুজীববিজ্ঞান, হাইড্রোলজি, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড সেফটির মতো নানা ক্ষেত্রের জ্ঞান।
ভূমির গভীর কোর থেকে শুরু করে মহাশূন্যের এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল অবজেক্ট পর্যন্ত। প্রকৃতির প্রতিটি স্তর এই বিষয়ের গবেষণার পরিসরে আসে। এককথায়, পৃথিবীকে জানাই এই বিষয়ের মূল লক্ষ্য।
কর্মপরিধি ও সম্ভাবনা
পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রকৌশল পেশার সুযোগ অত্যন্ত বিস্তৃত। পরিবেশবিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দপ্তর, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পানিসম্পদ বিভাগ, নদী ও উপকূল গবেষণা কেন্দ্র, মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা, স্প্যারো), বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্প ও এনজিওতেও কাজের সুযোগ রয়েছে।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
বর্তমান বিশ্বে একজন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্টিস্ট বা ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা ও বেতন দুটোই বিশ্বে প্রথম সারির পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম। উচ্চশিক্ষা ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই পেশায় খুব সহজেই নিজের ক্যারিয়ারের উন্নতি করা যায়। আর উন্নত বিশ্বে এই বিভাগের উচ্চ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ, ফেলোশিপ ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। যেগুলোতে কোয়ালিফাই করতে হলে ছাত্রজীবনে একটু অধ্যয়ন ও গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার সদিচ্ছাই যথেষ্ট।