দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মঘট করছে বিশ্বখ্যাত কফি চেইন স্টারবাকসের কর্মীরা। ধর্মঘটে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫টিরও বেশি শহর থেকে স্টারবাকস কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। এরইমধ্যে নিউইয়র্কে মিলল সাফল্য। কর্মীদের ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছে কফিবিক্রেতা কোম্পানিটি।
স্টারবাকসের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল, প্রতিষ্ঠানটি কর্মীদের সময়সূচি নির্ধারণ করেনি এবং অযৌক্তিকভাবে কর্মঘণ্টা বাড়িয়েছে-কমিয়েছে।
সিটি কর্মকর্তারা জানান, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত স্টারবাকসে ১৫ হাজারের বেশি খণ্ডকালীন কর্মী কাজ করেছেন, যাদের প্রত্যেকে প্রতি সপ্তাহের জন্য ৫০ ডলার করে পাবেন।
নিউইয়র্ক সিটির কনজিউমার অ্যান্ড ওয়ার্কার প্রটেকশন ডিপার্টমেন্টের কমিশনার ভিল্ডা ভেরা মায়ুগা জানান, নগর আইনে বলা আছে, কর্মীদের পূর্বনির্ধারিত ও পূর্বনির্দেশিত সময়সূচি দিতে হবে। কিন্তু স্টারবাকস সে আইন লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল সোমবার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সমঝোতা করে স্টারবাকস।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়া কফি চেইনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা রিটেইল খাতে সেরা কর্মপরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কার্যক্রম যেন সব ধরনের আইন মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। সম্প্রতি কফিহাউসের কর্মীসংখ্যা ও প্রশিক্ষণ বাড়াতে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বলে জানায় তারা।
২০২২ সালে কিছু কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে স্টারবাকসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন নিউইয়র্ক সিটির কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে শহরের সবগুলো স্টারবাকস শাখায় তদন্ত করা হয়।
এক বিবৃতিতে শহরের ওয়ার্কার প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, তারা স্টারবাকসে ‘ব্যবস্থাগত লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা’ খুঁজে পেয়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, ২০২১ সালের পর থেকে স্টারবাকস সিটির ‘ফেয়ার ওয়ার্কউইক আইন’ পাঁচ লাখ বারেরও বেশি লঙ্ঘন করেছে।
স্টারবাকসের এই আর্থিক সমঝোতাকে তারা নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শ্রমিক সুরক্ষা নিষ্পত্তি বলে উল্লেখ করেছেন।
মায়ুগা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সব কর্মী মর্যাদার সঙ্গে আচরণ পাওয়ার অধিকারী। স্টারবাকসের মতো বহু–বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি যখন নিয়মিতভাবে কর্মীদের অধিকার লঙ্ঘন করে, তখন আমাদের প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়াতে পারায় আমরা গর্বিত।’
সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী, স্টারবাকসকে এখন থেকে শহরের শ্রমিক সুরক্ষা আইন কঠোরভাবে মানতে হবে। এসব আইনে ফাস্টফুড খাতের নিয়োগদাতাদের কর্মীদের নিয়মিত সময়সূচি দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত শিফটে কাজের সুযোগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এদিকে স্টারবাকস দাবি করছে, নিউইয়র্কের শ্রমিক সুরক্ষা আইনগুলো জটিল। এ প্রসঙ্গে কফি চেইনটি বলছে, ‘আমরা আইনের উদ্দেশ্যকে সমর্থন করি এবং তা মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এর জটিলতা বাস্তব জীবনে নানা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
স্টারবাকস আরও জানায়, নিউইয়র্ক সিটির কর্মীদের যে অর্থ দেওয়া হবে, তা আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে; এটি বকেয়া মজুরি নয়।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস এই সমঝোতাকে ‘ঐতিহাসিক নিষ্পত্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এটি পরিশ্রমী নিউইয়র্কবাসীর পকেটে আবারও কোটি কোটি ডলার ফিরিয়ে দেবে এবং প্রত্যেক নিউইয়র্কবাসীর নির্ভরযোগ্য কর্মসূচি, পূর্ণ কর্মঘণ্টা এবং মৌলিক মর্যাদার অধিকারকে আরও দৃঢ় করবে।’
নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোম্পানির সমঝোতার ঘোষণা দেওয়ার পর সোমবার এক বিবৃতিতে ইউনিয়নের বারিস্টা কাই ফ্রিটজ বলেন, ‘যখন এই কোম্পানি আমাদের কর্মঘণ্টা কমায়, কর্মী সংকট তৈরি করে এবং আমাদের ইউনিয়ন ভাঙার চেষ্টা করে, তখন আমাদের কাজ করা এবং ক্রেতাদের জন্য ভালো অভিজ্ঞতা তৈরি করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।’
স্টারবাকস ওয়ার্কার্স ইউনাইটেড জানায়, কর্মীদের এই ধর্মঘট এখনো চলছে। ৮৫টি শহরের ১২০ টির বেশি স্টোরে চলছে এই ধর্মঘট। ওয়ার্কার্স ইউনাইটেডের আন্তর্জাতিক সভাপতি লিন ফক্স সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, নিউইয়র্ক সিটি ও তার বাইরেও হাজারো কর্মী ধর্মঘটে রয়েছেন। তাঁদের দাবি, একটি ন্যায্য ইউনিয়ন চুক্তি যেখানে চাকরির সুরক্ষা, উন্নত কর্মীসংখ্যা এবং অধিক বেতনের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হবে।
ফক্স আরও বলেন, ‘অনেক দিন ধরে স্টারবাকস যেন দায়মুক্তির সুযোগ খুঁজছে। সময়সূচি নিয়ে ছলচাতুরি করছে, কর্মীদের অবমাননা করছে এবং আইনি সুরক্ষাগুলোকে উপেক্ষা করছে।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভোক্তা বর্জন, নতুন প্রতিযোগীদের উত্থান ও উচ্চমূল্য নিয়ে গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চাপের মুখে আছে স্টারবাকস। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব পর্যায়েও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা।
যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান নিকোল। অক্টোবরে স্টারবাকস জানিয়েছে, এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে খোলা থাকা বৈশ্বিক স্টোরগুলোতে তাদের বিক্রি ১ শতাংশ বেড়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি স্থির ছিল অর্থাৎ কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি।