হোম > অপরাধ > রাজশাহী

১৯৮৮ সাল থেকে বারবার একঘরে সুভাষ

রানীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি

তেত্রিশ বছর আগে বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিরা মাছ-মাংস খেয়ে হরিবাসর চত্বর ‘অপবিত্র’ করেছিলেন। সেই ‘প্রায়শ্চিত্ত’ আজও করে যাচ্ছেন নওগাঁর রানীনগরের সুভাষ চন্দ্র সরকার। এই ঘটনার পর থেকে নানা অজুহাতে তাঁকে বারবার একঘরে করে রাখছেন সমাজপতিরা। অবশেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। 

ভুক্তভোগী উপজেলার পারইল ইউনিয়নের পারইল গ্রামের মৃত গজেন্দ্রনাথের ছেলে সুভাষ চন্দ্র সরকার। তিনি জানান, ১৯৮৮ সালে তাঁর বিয়ের দিন পাড়ায় হরিবাসর অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে আমন্ত্রিতরা মাছ-মাংস খেয়ে হরিবাসর চত্বরে চলাফেরা করার অপরাধে তাঁকে প্রায় সাত বছর একঘরে করে রাখা হয়। এরপর সমাজের লোক ডেকে সমাধান চাইলে ২০০ টাকা জরিমানা এবং বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে লোকজনকে খিচুড়ি খাওয়ানোর নিদান দেওয়া হয়। এই কাজ করেই তবে সমাজে ফিরিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে। 

কিন্তু এতেই শেষ হয়নি। নানা অজুহাতে তাঁকে বারবার একঘরে করা হয়। ২০০৬ সালে সমাজে স্থান দেওয়া হয়। ওই সময় গ্রামের লোকজন তাঁকে পারইল মহাশ্মশান ও চন্ডিমন্দিরের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে। তখন আগের কমিটির কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব চান তিনি। কিন্তু কমিটি কোনো হিসাব দিতে না পারায় রেজুলেশনের মাধ্যমে গ্রামবাসীর সিদ্ধান্তক্রমে আগের কমিটির সভাপতি সম্পাদকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ২০০৮ সালে ঠুনকো অজুহাতে সুভাষকে আবার একঘরে করা হয়। 

তবে এবার সুভাষকে একঘরে করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তাতে কি! ওই পাড়ায় বিয়ে, অন্নপ্রাশনসহ সামাজিক কোনো আচার অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকা হয় না। 

এমন পরিস্থিতিতে ১০ / ১২ বছর আগে পাড়ার বাইরে গিয়ে একমাত্র মেয়ের বিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়েছে সুভাষকে। এ নিয়ে সুভাষ চন্দ্র বলেন, কয়েক দিন আগে তাঁর চাচাতো ভাই ভবতোষ মারা যান। তাঁর শ্রাদ্ধ হয়েছে গত শুক্রবার। এ সময় সমাজের সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হলেও তাঁকে বাদ রাখা হয়েছে। 

তিনি বলেন, কী কারণে আমাকে একঘরে করে রাখা হয়েছে-এ প্রশ্নের উত্তর কেউ দিচ্ছে না। আমার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রেখেছে। পাড়া থেকে উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। একের পর এক মিথ্যা মামলায় হয়রানি করছে। সমাজের লোকজনের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।

গত কয়েক বছরে বিষয়টির সমাধানের জন্য পাড়ায় প্রায় নয় দফা সালিস বৈঠকের চেষ্টা করেও কাউকে বসাতে পারেননি সুভাষ। ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি। অবশেষে বাধ্য হয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে সমাজে স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করার অধিকার চেয়ে গ্রামের মাতব্বর সুনীল চন্দ্র সাহা, দ্বিজেন্দ্রনাথ প্রামাণিক ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গ্রামের মাতব্বর সুনীল চন্দ্র সাহা বলেন, তাঁকে একঘরে করে রাখা হয়নি। সমাজে সবার সঙ্গে ওঠবস করছে এবং চলাচলও করছে। তবে সমাজের লোকজনদের প্রতি অন্যায়, প্রতারণা মামলা করাসহ নানা উপদ্রব করার কারণে সমাজের লোকজন তাঁকে এড়িয়ে চলছে। 

অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ৩/৪ বছর আগে সুভাষ চন্দ্র একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সেটা সমাধান করে দিয়েছিলাম। তবে এখন কী অবস্থা তা বলতে পারব না। 

বিষয়টি খতিয়ে দেখে সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো।

রাজশাহীর চরাঞ্চলে শিয়ালের আতঙ্ক, এক রাতে আক্রান্ত ২০০ গরু

বগুড়ায় বিএনপির মিছিলে হামলার মামলায় শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

ওসমান হাদি হত্যার বিচার দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

সিরাজগঞ্জে লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষ, আহত ২

যুবকের হাত-পা কেটে দেওয়ার অভিযোগ জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে

চিড়িয়াখানা ফাঁকা করে আবার প্রাণ ফেরানোর চেষ্টায় রাসিক

কৃষকেরা ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন যে কারণে

প্রাথমিকের শতভাগ বই এলেও সংকট মাধ্যমিকে

নারীকে গলা কেটে হত্যা, সাবেক স্বামী আটক

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে রাজশাহী