হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

আবাদি জমিতে পুকুর খননে বাধা, কৃষককে এক্সকাভেটরের নিচে ফেলে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

এক্সকাভেটর রেখে পালাতে গিয়ে আটক হয়েছে চালক। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় আবাদি জমিতে পুকুর খনন করতে বাধা দেওয়ায় এক তরুণকে ভেকু (এক্সকাভেটর) দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার পর পিষে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বড় পালশা বিলে গ্রামের শতাধিক মানুষের সামনেই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পুলিশ ভেকু চালককে আটক করেছে।

নিহত তরুণের নাম আহমেদ জুবায়ের (২৩)। তাঁর বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। আটক ভেকু চালকের নাম আব্দুল হামিদ (২৮)। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলে। ভেকুর মালিকের বাড়িও টাঙ্গাইলে।

মোহনপুরের ধুরইল ইউনিয়ন বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান বকুলসহ কয়েকজন প্রায় শতাধিক বিঘা জমি ঘিরে অবৈধভাবে পুকুর খনন শুরু করেছিলেন। উপজেলা বিএনপির এক নেতা তাঁদের প্রশ্রয় দিচ্ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরেই কৃষকের জমিতে একটি চক্র জোরপূর্বক পুকুর খনন করে। কৃষক জানতেই পারে না তাঁর জমি পুকুর হয়ে যাচ্ছে। জোরপূর্বক পুকুর খননের পর চক্রটি তা মাছ চাষিদের কাছে মোটা টাকায় ইজারা দেয়। এর সামান্য একটি অংশ তখন জমির মালিককে দেওয়া হয়। আগে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এভাবে পুকুর কাটতেন। তাঁরা আত্মগোপন করলেও অবৈধ পুকুর খনন থেমে নেই।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিহত আহমেদ জুবায়েরের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে কবর খনন করা হচ্ছে। কথা হয় স্ত্রী নুসরাত জাহান মোহনা আক্তার জুঁইয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর ওপর ভেকুর চাকা তুলে দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

রাতে ওই ঘটনার সময় শতাধিক মানুষের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আল-আমিন হোসেনও। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরেই তাঁরা শুনতে পাচ্ছিলেন যে তাঁদের জমিতে বকুলসহ কয়েকজন পুকুর কাটবেন। গ্রামবাসী এতে ‘না’ করেছেন। তাই গ্রামবাসীর চোখ এড়াতে উল্টো পথে রাতে ভেকু নামানো হয়। গ্রামের লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে মসজিদে গিয়ে মুয়াজ্জিন আবদুল মান্নানকে দিয়ে মাইকে ঘোষণা দেওয়ান। মাইকে বলা হয়, ‘যারা যারা নিজেদের জমি রক্ষা করতে চান, তাঁরা এখনই বিলে নেমে যান।’ এরপর গ্রামের মানুষ জমির দিকে ছুটে যান। প্রথম দলটির সঙ্গেই জমির কাছে যান আহমেদ জুবায়ের।

আমির হোসেন জানান, তাঁরা গিয়ে দেখেন যে খগেনের জমি কাটা শুরু হয়েছে। তখন গ্রামের লোকজন ভেকু চালককে থামতে বলেন। কিন্তু তিনি থামছিলেন না। গ্রামবাসী ভেকুর দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে তিনি ভেকুর বাকেট (সামনের অংশ) চারপাশে ঘোরাতে থাকেন, যাতে কেউ কাছে ভিড়তে না পারে। এ সময় বাকেট গিয়ে লাগে জুবায়েরের মাথায়। তিনি পড়ে যান। তখন পালাতে গিয়ে তাঁর ওপর ভেকু তুলে দেন চালক।

এরপর স্থানীয়রা জুবায়েরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর স্থানীয়রা ভেকু চালককে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে আটক করে। রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বিএনপি নেতা বকুল। গ্রামবাসীর তোপের মুখে তিনি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যান। বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁর মোটরসাইকেল ও ভেকুতে আগুন ধরিয়ে দেন।

আজ সকালে ওই বিলে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া মোটরসাইকেল পড়ে আছে। ভেকুর নিচে তখনো আগুন জ্বলছে। দলে দলে মানুষ গিয়ে এসব দেখছেন। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আফাজ উদ্দিন। তিনি বলছিলেন, ‘মানুষ মেরে এভাবে রাজনীতি হবে না।’

কথা হয় মাঠের কৃষক জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো পুকুর কাটতে বলিনি। আমরা কৃষক মানুষ, ধান চাষ করব। মাছ তো চাষ করতে চাই না। তারা কেন আমাদের বিনা অনুমতিতে পুকুর কাটতে আসছে? এখানে ১০০ বিঘা জমিতে পুকুর কাটতে হলে কোটি টাকা খরচ আছে। এই টাকা বকুলকে কে দিচ্ছে? সবকিছুই তদন্ত হওয়া দরকার।’

কথা বলতে বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামান বকুলের মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। একজন ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘রং নাম্বার।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পুকুর খননের সঙ্গে রাকিবুল মাস্টার নামের এক ব্যক্তিও যুক্ত। আর ভেকু এনে দিয়েছেন রাজশাহীর খড়খড়ি এলাকার ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন। উজ্জ্বলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে রাকিবুল মাস্টারই ভালো বলতে পারবে।’ রাকিবুল মাস্টারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সকালে ঘটনাস্থলে যান ধুরইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজিম উদ্দিন এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন। সাবেক চেয়ারম্যান কাজিম উদ্দিন বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে এভাবে অপকর্ম করবে তা মেনে নেওয়া যায় না। বকুল একা নেই, তার ওপরেও কেউ আছে। সবাইকে খুঁজে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিএনপি নেতা ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘দল এখনো ক্ষমতায় আসেনি। তার আগেই এমন কর্মকাণ্ড আমাদের জন্য বিব্রতকর। যারা এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত হলেও যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

স্থানীয় সবাই পুকুর কাটার মূল হোতা হিসেবে বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামান বকুলের কথা জানলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে বিকেলে জানিয়েছেন মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দীন। তিনি বলেন, ‘কে কে জড়িত তা আমি জানি না। শুধু ঘটনাস্থল থেকে চালককে আটক করেছি। তার কথা জানি। এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা রেকর্ড হলে আসামিদের সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারব।’

তিনি জানান, নিহত জুবায়েরের বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। রাতে জুবায়েরের মরদেহ পুলিশ হেফাজতে ছিল। ময়নাতদন্তের জন্য সকালে মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রাবিতে আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাকসুর জিএস আম্মারের

ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি

রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে যাত্রা, পুলিশি বাধায় পণ্ড

ইউপি সদস্যের কার্যালয়ে আটকে রাখা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ

রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে পদযাত্রায় পুলিশের বাধা, সড়ক অবরোধ

বৃক্ষরোপণে বদলে যাচ্ছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

জমিতে পুকুর কাটতে বাধা দেওয়ায় কৃষককে ভেকুচাপায় হত্যার অভিযোগ

মুরগি মারার অভিযোগে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মামলা

৬ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

নওগাঁয় বাসচাপায় কারারক্ষী নিহত