ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় পটকা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ৬টার দিকে উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন বারুইগ্রাম গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৩০), দক্ষিণ বাঁশহাটি গ্রামের আবুল গণির স্ত্রী আফিলা খাতুন (৪৫)। তাঁরা দুজনই পটকা তৈরির কাজ করতেন।
জানা যায়, চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশহাটি গ্রামের মৃত চান মিয়া মুন্সির ছেলে বুরহান উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে নিজ বাড়িতে পটকা তৈরি করতেন। এতে নিজ বাড়িতে পটকা তৈরির বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাতেন। পটকা তৈরিতে প্রায় ১৫০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করতেন বলে জানা যায়। আজ বুধবার সকাল ৬টার দিকে নাছিমা খাতুন ও আফিলা খাতুন পটকা তৈরি করার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বসতঘরের মেঝে দেবে যায়। ঘরের তিনটি রুমের দরজা-জানালা বিস্ফোরণে উড়ে যায়। ঘরে থাকা পটকার সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, তিনটি ঘর তছনছ হয়ে গেছে। ওপরের টিন ও দেয়াল বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। পটকা তৈরির সরঞ্জামের ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আশপাশের ঘর থেকে বিপুল পরিমাণ পটকা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছেন। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌরিপুর সার্কেল, পুলিশ সদস্য, ডিবি পিবিআই, গোয়েন্দা, সদস্যরা অবস্থান করছেন।
ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন কারখানার মালিক বুরহান উদ্দিন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।
নিহত আফিলার স্বামী আবুল গণি বলেন, ‘আমি সকালে আমার স্ত্রীকে পটকা তৈরির কাজ করতে পাঠিয়েছিলাম। একটু পরেই বিস্ফোরণ ঘটে। এসে দেখি আমার স্ত্রী আর নেই। আমি গরিব মানুষ আমার তো আর কেউ রইল না।’
পটকা তৈরিতে কাজ করেন একই গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে মো. হুমায়ূন। হুমায়ূন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে ফটকা বানাতে কাজ করি। এখানে অনেকেই কাজ করে। আজ সকালে আমি আসতাম তার আগেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।’
নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সকাল থেকে অবস্থান করছি। পটকা তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই নারী শ্রমিক নিহত হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে জেনেছি এখানে পটকা তৈরি হতো। তবে এত বিপুল পরিমাণে হতো তা কেউ জানে না। প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, পটকা তৈরির সরঞ্জামগুলো ডিনাইট হয়ে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’