ব্রাজিলে আমাজন বনের কিনারায় আয়োজিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ-৩০’ এর মূল প্রবেশপথ আটকে দিয়েছেন একদল আদিবাসী বিক্ষোভকারী। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে সম্মেলনের পঞ্চম দিনের বৈঠক শুরুর প্রাক্কালে প্রবেশ পথ আটকে দিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অবরোধ গড়ে তোলেন আদিবাসীরা। এ সময় তাঁরা ‘কেউ ঢুকবে না, কেউ বেরোবে না’ স্লোগানে মানবশৃঙ্খল তৈরি করে মূল গেট আটকে রাখেন।
এ সময় ব্রাজিলের সামরিক বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কোনো ধরনের শারীরিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী পোশাক পরিহিত ছিলেন। আর আদিবাসীদের মানবশৃঙ্খলের বাইরে আরও একটি স্তর তৈরি করে অন্যান্য পরিবেশবাদী গোষ্ঠীর কর্মীরা তাঁদের সমর্থন জানান।
গত চার দিনের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কপ ৩০–এর কর্মসূচি ব্যাহত করলেন আদিবাসীরা, যদিও আয়োজকেরা এবারের সম্মেলনটিকে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও উদ্যাপনের সমাবেশ হিসেবে তুলে ধরছেন।
জানা গেছে, এই ধরনের বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে মুন্দুরুকু নামে একটি আদিবাসী গোষ্ঠী। তাঁরা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন। একটি লিখিত বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট লুলা, আমরা কপ–এর সামনে এসেছি, কারণ আমরা চাই—আপনি আমাদের কথা শুনুন। কৃষি ব্যবসার স্বার্থে আমরা আমাদের বিসর্জন দিতে রাজি নই। আমাদের বন বিক্রির জন্য নয়। আমরা জলবায়ুর রক্ষক, বড় বড় কোম্পানির লাভের জন্য আমাজনকে আর ধ্বংস করা যাবে না।’
মুন্দুরুকু নেতারা ব্রাজিল সরকারের প্রতি বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করেছেন। এসব দাবির মধ্যে ছিল—নদীগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে উন্নয়নের পরিকল্পনা বাতিল, বন নিধন নিয়ে আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও চালু হওয়া শস্যবাহী রেল প্রকল্প স্থগিত, আদিবাসী ভূখণ্ডের সুস্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ এবং বন উজাড় থেকে প্রাপ্ত কার্বন ক্রেডিট প্রত্যাখ্যান।
আদিবাসী অবরোধের মুখে সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীদের শেষ পর্যন্ত একটি বিকল্প প্রবেশপথ দিয়ে ভেতরে ঢোকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় জাতিসংঘের কর্মীরা দ্রুত ধাতব ডিটেক্টর সরিয়ে বিকল্প প্রবেশপথ তৈরি করেন।
স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বিক্ষোভটি শুরু হলে সম্মেলনের সভাপতি ও অভিজ্ঞ ব্রাজিলিয়ান কূটনীতিক আন্দ্রে করেয়া দু লাগো আলোচনা করার জন্য বিক্ষোভকারীদের সামনে যান। আলাপ চলাকালে তিনি এক আদিবাসী নারীর শিশুকে কোলে নেন এবং তাঁদের সঙ্গে শান্তভাবে কথা বলেন। তাঁর কথায় বিক্ষোভকারীরা শান্ত হলে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে প্রবেশপথ থেকে তাঁরা সরে যান।
জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থা জানিয়েছে, এটি ছিল একটি ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ’। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল না। তবে অভিজ্ঞ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী হার্জিত সিং বলেছেন, ‘৩৩ বছরে কপ আলোচনায় তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় আদিবাসীরা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন—জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যের প্রকৃত রক্ষক তারাই।’
এর আগে গত মঙ্গলবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন রাতে আরেকটি ঘটনায় আদিবাসী বিক্ষোভকারীরা প্রধান ভেন্যুর দরজায় হঠাৎ ধাক্কা দিলে দুজন নিরাপত্তারক্ষী আহত হয়েছিলেন।