শ্যামনগরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মুন্ডা সম্প্রদায়ের পাড়ায় তাণ্ডব চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ধুমঘাট মুন্ডা পল্লিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীদের হামলায় বিলাসী মুন্ডা, রিনা মুন্ডা, সুলতা মুন্ডা ও কার্তিক মুন্ডা নামে চারজন আহত হয়েছেন।
জানা যায়, উপজেলার শ্রীফলকাটি গ্রামের গফুর সরদারের ছেলে রাশিদুল সরদার ও এবাদুল সরদারের নেতৃত্বে বংশীপুর থেকে আসা দুই শতাধিক ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল এই হামলা চালায়। হামলায় জড়িতরা সরকারদলীয় ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। আহতদের উদ্ধার করে বেলা ১২টার দিকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. জামান জানান, মুন্ডা সম্প্রদায়ের চারজনকে বেলা সোয়া ১২টার দিকে ভর্তি করা হয়। তাঁদের শরীরে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত ও ধারালো দা দিয়ে কোপানোর চিহ্ন রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মুন্ডা সম্প্রদায়ের ভোগ দখলে থাকা জমি দখলের চেষ্টায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর হামলাকারীরা চলে যায়।
হামলার আগে দুই শতাধিক লাঠিয়াল মুন্ডা পল্লিতে বসবাসরত পরিবারগুলোকে অবরুদ্ধ করে রেখে বিরোধপূর্ণ আট বিঘা জমি পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করে। মুন্ডা সম্প্রদায়ের চাষের জমিতে বেড়ে ওঠা ধানের চারা পাওয়ার টিলার দিয়ে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয় তারা।
জানা গেছে, এই জমি দখলের পেছনে মূল কলকাঠি নাড়ছেন আব্দুল আলীম। তিনি নিজেকে তরুণ লীগের উপজেলা সভাপতি দাবি করেন। আর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ফিরোজ আহমেদও এর সঙ্গে জড়িত। তবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগী ফনিন্দ্রনাথ মুন্ডা অভিযোগ করে বলেন, ‘আকস্মিকভাবে শুক্রবার বেলা সাড়ে ৯টার দিকে দুই থেকে আড়াইশ সন্ত্রাসী মুন্ডা পল্লি ঘিরে ফেলে। সন্ত্রাসীরা প্রতিটি পরিবারকে ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রেখে তাঁদের ভোগ দখলে থাকা জমিতে কলের লাঙল নামিয়ে চাষ শুরু করে। একপর্যায়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে কোনো রকমে নিজেদের মুক্ত করে জমি চাষে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন অনেকে। তখন তাঁদের বেধড়ক মারপিট করা হয়। এ সময় রিনা মুন্ডা, সুলতা মুন্ডা ও বিলাসী মুন্ডা ও নরেন মুন্ডা মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশকে জানানো হয়। দীর্ঘ সময় পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলার সঙ্গে জড়িতরা চাষ শেষে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। মুন্ডা সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর তৈরি বীজতলা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।’
জানতে চাইলে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া রাশিদুল সরদার বলেন, তাঁদের জমি মুন্ডা সম্প্রদায়ের লোকজন অবৈধভাবে দখলে রেখেছিল। শুক্রবার ওই জমি চাষ করতে গেলে বাধার সৃষ্টি করায় কয়েকজন লোক নিয়ে তাঁদের জমিতে নামতে বাধা দেওয়া হয়। কাউকে মারপিটের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
একই কথা বলেন এবাদুল সরদার। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার আমলে এই জমি কেনা। আমরা জমি চাষ করতে এসেছিলাম। ওরা বাধা দেবে তাই ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম। তাদের মারধর করা হয়নি। এখন নিজেরাই জখম করে নাটক সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ বলেন, খবর পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।