হোম > অপরাধ > খুলনা

ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ কর্মী বরুণ হত্যা রাজনৈতিক নাকি জমি সংক্রান্ত

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ শহরের হামদহ ঘোষপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মী বরুণ ঘোষ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ। পরিবারের বক্তব্যে এই হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক বিরোধের ইঙ্গিত রয়েছে। তবে জমিজমা নিয়েও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল বলে জানা যাচ্ছে। সেখানে নৌকার প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী উভয়েই দাবি করছেন, বরুণ তাঁদের পক্ষে কাজ করেছেন। পরিবার বলছে, নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকেই বরুণ জীবননাশের হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। 

এদিকে বুধবার বরুণ হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তাঁর বন্ধুরা। এদিন দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা। 

কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ কুমার নাথ, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ বিশ্বাস সাধন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব দে। এ সময় স্থানীয় নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 
 
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বর থেকে এসএসসি–৯৪ ব্যাচে বরুণের বন্ধুরা শহরে বিক্ষোভ করেন। পরে পোস্ট অফিস মোড়ে গিয়ে মানববন্ধন করেন তাঁরা। 

মানববন্ধনে বরুণের বন্ধু শামীম আহমেদ, রবিন অধিকারী, মোহাম্মদ আলীসহ বন্ধুরা বলেন, বরুণ খুব ভালো ছেলে ছিল। ওর হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। আমরা কাউকে উদ্দেশ করে নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধু বলতে চাই, আমাদের বন্ধু হত্যার সঠিক কারণ খুঁজে বের করুন। দোষীদের আইনের আওতায় আনুন। 

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঝিনাইদহ শহরের ঘোষপাড়া মোড়ে ব্রিজের ধারে একটি চায়ের দোকানের সামনে ছিলেন বরুণ ঘোষ। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে আহত করে। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

বরুণ ঘোষ (৪০) ঝিনাইদহ শহরের হামদহ ঘোষপাড়া এলাকার নরেন ঘোষের ছেলে। তিনি রড-সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। 

বরুণ হত্যাকাণ্ডের সময় চায়ের দোকানে কারা অবস্থান করছিলেন তা স্থানীয়রা বা পুলিশ কেউই জানাতে পারছে না। ঘটনার পর সেখানে ধারালো অস্ত্রের একটি হাতল পড়ে ছিল। 
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, বরুণ আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। তিনি নৌকার পক্ষে ছিলেন। তবে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতেন না। হামদহ এলাকাসহ আশপাশে বেশ সম্পত্তি রয়েছে তাঁদের। এটি নিয়েও অনেকের সঙ্গে বিরোধ ছিল। জমির বিরোধ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে অনেকের ধারণা। আবার কেউ কেউ এটি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা বলে দাবি করছেন। 

বরুণ ঘোষের বোন সুচিত্রা রানী ঘোষ গত মঙ্গলবার রাতে সদর হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমরা কোন দিকে যাব, নিরাপত্তা কে দেবে? তোমরা কি 
বিচার করো? তোমরা কোনো বিচার করো না। ভোট করে পাস করে তোমরা কি হও আর গরিব মানুষের কী লাভ হয়?’ 

হাসপাতালে বরুণের ভাবি নীলিমা ঘোষ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনের পর থেকেই বরুণ বলত বাড়ি বাইরে যাব না। যদি আমার কিছু ক্ষতি হয়ে যায়। আমরাও বলতাম তুই বাসায় থাক। কেবল ভোট শেষ হলো। কিছুদিন পরে বাইরে যাবি।’ 

তবে বুধবার দুপুরে বরুণের বাড়িতে গেলে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বরুণের পরিবারের সদস্যরা আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কনক কান্তি দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, বরুণ আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছিল, বিভিন্ন সভায় গিয়েছিল। এটিএ হত্যাকাণ্ডের একটি কারণ হতে পারে বলে তাঁর ধারণা। 

ঝিনাইদহ-২ আসনের পরাজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, বরুণ নৌকার কর্মী ছিলেন। ভোটের বরুণ তাঁকে গিয়ে বলেছিলেন, বিশেষ মহল তাঁকে নৌকার ভোট না করতে হুমকি–ধামকি দিচ্ছে। 

তাহজীব বলেন, ‘আমি তাকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে, তুমি নৌকার সমর্থন কর, শেখ হাসিনার দল কর, তোমার কোনো ভয় নেই। তারপর ভোট শেষ হলো এবং এই হত্যার ঘটনা ঘটল।’ 

অন্যদিকে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল বলেন, বরুণ ঘোষ নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কাজ করেছেন, বিভিন্ন প্রচার সভাতেও গেছেন। 

তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারি, সে আমার একজন কর্মী ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে যেটা বলা হচ্ছে, সেটি সঠিক কথা না। তবে আমিও চাই এর ঘটনার প্রকৃত সত্য বের করে আনা হোক এবং জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’ 

বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ কুমার নাথ বলেন, ‘নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আক্রোশের বশবর্তী হয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এ ধরনের আঘাত সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। অনতিবিলম্বে এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। বিচারের আওতায় নেওয়া হোক।’ 
 
ময়নাতদন্তে অংশ নেওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে ডা. রেজাউল ইসলাম রেজা জানান, বরুণের হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত বেশি ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বাকি তথ্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই জানা যাবে। 

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ বরুণ হত্যা রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে। আমরাও তার পরিবারের এজাহারের অপেক্ষায় আছি। মৃতদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। বরুণদের জমি–জমা সংক্রান্ত মামলা আদালতে চলমান আছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে থানায় অন্যদের বিরুদ্ধে তাঁর ভাই অরুণ বাদী হয়ে আদার সেকশনের একটি মামলাও করেছিলেন। যেটার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।’

জামায়াতের কৃষ্ণের চ্যালেঞ্জ অনেক

প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার: হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে সড়ক অবরোধ

‘আদালতে হাজিরা দিতে এসে লাশ হয়ে ফিরলে কার কাছে বিচার চাইব’

খুলনায় জোড়া খুন: আসামিদের ভয়ে সন্ত্রস্ত পরিবার, পুলিশের মামলা অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে

পূর্ব সুন্দরবনে অভয়ারণ্যের খালে মাছ ধরার অভিযোগে ১০ জেলে গ্রেপ্তার

গল্লামারী সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবিতে ১ ঘণ্টা ‘অচল কর্মসূচি’

খুলনায় ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু

খুলনায় জোড়া হত্যা: বিলুপ্ত ‘ইহুদি’ বাহিনীর সদস্য আটক

ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে প্রশাসনিক ক্যুর চেষ্টা করছে: জামায়াত আমির

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় খুলনা বারের সাবেক সভাপতি কারাগারে