খুলনার তেরখাদা উপজেলার পহরডাঙ্গা গ্রামে বাবা-ছেলেকে হত্যার দায়ে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার খুলনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদার এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ মামলার অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের খালাস দিয়েছেন আদালত।
২০১৯ সালের ৬ আগস্ট রাতে তেরখাদা উপজেলার পহরডাঙ্গা গ্রামের পিরু শেখ ও তাঁর ছেলে হত্যার শিকার হন। এর দুদিন পর স্বামী ও ছেলেকে হত্যা মামলা দায়ের করেন পিরু শেখের স্ত্রী মাহফুজা বেগম।
মাহফুজা বেগম এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন জানিয়েছেন। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন তিনি। মাহফুজা বেগম বলেন, ‘ওই দিন রাতে আমার স্বামী ও সন্তান বাঁচার জন্য আসামিদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ে তাদের মন গলেনি। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—তেরোখাদা ছাগলাদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলাম (৫৪), মো. আব্দুর রহমান (৫৫), জমির শেখ (২৫), শেখ সাইফুল ইসলাম (৩৫), খালিদ শেখ (৩২), এস্কেন্দার শেখ (৪২), জসিম শেখ (৩৫), হোসেন শেখ (৩০), জিয়ারুল শেখ (২৬), বাহারুল শেখ (২৪), আব্বাস শেখ (২৪), অহিদুল গাজী (৩৪), খাইরুল শেখ (৩৫), কেরামত মল্লিক (৩৫), মাহবুর শেখ (৪৯), বাবু শেখ (৩৫) ও নুর ইসলাম শেখ (৩৭)।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আহাদুজ্জামান জানান, ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট রাতে তেরখাদা উপজেলার পহরডাঙ্গা গ্রামের পিরু শেখ ও তাঁর পরিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ২টার দিকে দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সিঁধ কেটে ভুক্তভোগীর ঘরে প্রবেশ করে। বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয় তারা। এ দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে পিরুর মাথায় কোপ দেয়। পাশের ঘর থেকে তাঁর ছেলে নাঈম বাবাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসলে তাকে টেনে হিঁচড়ে আসামিরা উঠানে নিয়ে যায়। এ সময় নাঈমেরও মাথায় কোপ দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ওই অস্ত্র নাঈমের বুকে ঢুকিয়ে দিলে ঘটনাস্থলে নাঈমের মৃত্যু হয়। আসামিরা চলে যাওয়ার পর পিরু শেখকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পিরু মারা যায়। এ ব্যাপারে নিহত পিরুর স্ত্রী ঘটনা ২ দিন পর বাদী হয়ে তেরখাদা থানায় স্বামী ও সন্তান হত্যার অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই মুক্ত রায় চৌধুরী ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি ৩ নম্বর ছাগলাদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ১৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আইনজীবী আহাদুজ্জামান বলেন, ‘এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি। তবে তিনি মনে করেছিলেন আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেবেন। কিন্তু বিচারক যেটি ভালো মনে করেছেন সেটি করেছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন। সেখানে তারা ন্যায়বিচার পাবেন বলে মনে করি।’