খুলনা ওয়াসায় ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্পের (ফেজ-২)’ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটেছে। রাজনৈতিক চাপে ষষ্ঠ গ্রেডের একজন প্রকৌশলীকে এমন পদে বসানো হয়েছে, যেখানে কমপক্ষে চতুর্থ গ্রেডের যোগ্যতা দরকার।
নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে যৌথভাবে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে ৯ ডিসেম্বর। মেয়াদ ১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে ৩০ জুন ২০৩০।
সূত্র বলছে, গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেত্রী নুসরাত তাবাস্সুম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন ছাত্রনেতা। তাঁরা ষষ্ঠ গ্রেডের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চাপ দেন। তাঁরা চলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আসে নিয়োগের আদেশ। এতে বলা হয়, খুলনায় পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা না থাকায় রেজাউল ইসলাম প্রকল্প পরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা-৩ শাখার উপসচিব ইবাদত হোসেন স্বাক্ষরিত আদেশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। অথচ বাস্তবে সেখানে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ রয়েছেন।
প্রকল্পে ফোকাল পার্সন হিসেবে আছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন। তাঁকে ওই পদ থেকে অপসারণ না করেই নতুন পিডি করা হয়েছে রেজাউল ইসলামকে। ফলে তাঁদের দুজনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। আর এতে জড়িয়ে পড়েছেন বোর্ড পরিচালক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সব মিলিয়ে খুলনা ওয়াসায় এখন হযবরল অবস্থা।
এই প্রকল্পে পিডির জন্য আবেদন করেছিলেন চারজন প্রকৌশলী। তাঁরা হলেন সেলিম আহমেদ, রেজাউল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন ও আরমান সিদ্দিকী। এর মধ্যে সেলিম আহমেদ পঞ্চম গ্রেডের। বাকিরা সবাই ষষ্ঠ গ্রেডের। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ বোর্ডে অন্যদের না ডেকেই রেজাউল ইসলামকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত বুধবার বিকেলে খুলনা ওয়াসার নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান যোগদান করেন। তবে অফিস শুরু করেন পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। ওই দিন সকালে দপ্তরে হাজির হন ছাত্র প্রতিনিধি বোর্ড সদস্য ইব্রাহিম খলিল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাস্সুম, খুলনা-১ আসনে এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী অহিদুজ্জামান, তাঁদের সহযোগী আলিফ, আরিয়ান, সাব্বির ও সাইম। এ সময় তাঁরা ওয়াসার ফেস-২ প্রকল্পের পিডি নিয়োগ নিয়ে এমডিকে চাপ দিতে থাকেন। তাঁকে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর ফাইল প্রসেস করতে বলা হয়। তাঁরা ওয়াসা ভবন ত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পর ওই প্রকৌশলীকে পিডি নিয়োগ দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ আসে।
নুসরাত তাবাস্সুমসহ অন্যদের নিয়ে খুলনা ওয়াসায় যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন খুলনা ওয়াসার বোর্ড সদস্য ও ছাত্র প্রতিনিধি ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, ‘এনসিপি নেতা অহিদুজ্জামানের নির্বাচনী এলাকায় ওয়াসার কার্যক্রম এবং এলাকাবাসীর কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে কিছু কথা হয়েছে। তবে ওই সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না।’
২০২৩ সালে প্রকল্পটির প্রাথমিক কাজ শুরু হওয়ার পর এডিবির সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব পান মো. কামাল হোসেন। ২০২৪ সালের ৩০ মে তৎকালীন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক আদেশে মো. কামাল হোসেনকে প্রকল্পের ফোকাল পার্সন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই আদেশে বলা হয়, এই দায়িত্ব পালনকালে তিনি অন্য কোনো প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ফলে তিনিই এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
নিয়োগ বোর্ডে ডাকা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাকে ডাকা হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠি পাইনি।’ অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পে ফোকাল পার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ওই পদ ছাড়ার কোনো আদেশ পাইনি। আদেশ পেলে দায়িত্ব ছেড়ে দেব।’
অপর প্রকৌশলী সেলিম আহমেদ বলেন, ‘খুলনা থেকে চারজন আবেদন করেছিলাম। কিন্তু নিয়োগ বোর্ডে আমাকে ডাকা হয়নি।’ তবে নতুন পিডি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. রেজাউল ইসলামের দাবি, নিয়োগ বোর্ডে সবার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পূর্ণ কর্মদিবস অফিস করেছেন। তাহলে নিয়োগের সাক্ষাৎকার কীভাবে দিলেন? এমন প্রশ্নের মুখে তিনি ফোন রেখে দেন।
খুলনা ওয়াসার এমডি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি নতুন যোগ দিয়েছি। প্রকল্প সম্পর্কে কিছু জানা নেই।’