রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সফরে ভারতে এসেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুতিন দিল্লিতে পৌঁছান। বরাবরের মতো এবারও তাঁর বিদেশ ভ্রমণের সময়কার অত্যন্ত সতর্কতামূলক ও গোপনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। যদিও স্বাগতিক দেশগুলো নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, তবে পুতিনের প্রতিটি সফরেই কঠোর সতর্কতা ও লোকচক্ষুর আড়ালে একটি নিজস্ব নিরাপত্তাবলয় থাকে।
রাশিয়ার অন্যতম গোপন নিরাপত্তা সংস্থা ফেডারেল প্রোটেক্টিভ সার্ভিস (এফএসও) এগুলো তদারকি করে। পরিবহন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত সুরক্ষা—প্রতিটি বিষয় সুরক্ষিত রাখে এফএসও।
পুতিনের দৃশ্যমান দেহরক্ষীরা একটি বৃহত্তর ও জটিল সুরক্ষা নেটওয়ার্কের কেবল উপরিভাগ। কেজিবি প্রোটোকলের ভিত্তিতে গঠিত এফএসও এই বিশাল নিরাপত্তাব্যবস্থার তদারকি করে থাকে।
পুতিনের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরা প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এসবিপি) বিশেষ শাখা থেকে আসেন, যাঁদের কঠোর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। প্রার্থীদের অবশ্যই ৩৫ বছরের কম বয়সী, ৫ ফুট ১০ ইঞ্চির বেশি লম্বা, শারীরিকভাবে ফিট, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে স্থিতিশীল হতে হয়। বিদেশি ভাষায় দক্ষতা, পুঙ্খানুপুঙ্খ পটভূমি পরীক্ষা এবং আনুগত্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক।
সাবেক দেহরক্ষী গ্লেব কারাকুলভ জানান, পুতিন মোবাইল ফোন এড়িয়ে চলেন এবং কখনো কখনো বিশেষ ট্রেনে ভ্রমণ করেন। সেখানে স্নাইপার, ড্রোন, ইলেকট্রনিক গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ এবং বিশেষ কমিউনিকেশন ইউনিট অন্তর্ভুক্ত থাকে।
শেফদের জন্য প্রাথমিক নিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্লাভস পরা, দিনে একাধিকবার পোশাক পরিবর্তন করা এবং হাত কাটা আছে কি না, তা পরীক্ষা করা। প্রেসিডেন্টের রান্নাঘরে প্রবেশ করা প্রতিটি উপাদান সাবধানে পরীক্ষা করা হয়।
প্রেসিডেন্টের জন্য প্রস্তুত করা সমস্ত খাবার প্রথমে তাঁর দেহরক্ষীরা চেখে দেখেন। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, কোনো বিষ মেশানো খাবার তৈরি হলে তা যেন দেহরক্ষীদের মাধ্যমে আগে প্রভাবিত হয়।
বিদেশে গেলে পুতিন নিজের বুলেটপ্রুফ অরাস সেনাট (Aurus Senat) লিমুজিনে ভ্রমণ করেন। এটি গ্রেনেড প্রতিরোধী, জরুরি অক্সিজেন, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা এবং উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। এই গাড়িকে ‘চাকার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দুর্গ’ (fortress-on-wheels) বলা হয়। পুতিনের ভারত সফরের জন্য এই অরাস সেনাট লিমুজিন মস্কো থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে।।
পুতিনের ইলিউশিন আইএল-৯৬-৩০০পিইউ বিমানটিকে ‘ফ্লাইং প্লুটন’ বলা হয়, যাতে সুরক্ষিত যোগাযোগব্যবস্থা, একটি জিম, চিকিৎসাকেন্দ্র, সম্মেলনকক্ষ ও পারমাণবিক হামলা অনুমোদনের সরঞ্জাম রয়েছে।
পুতিনের ভ্রমণ রুটিনের একটি অস্বাভাবিক অংশ হলো তাঁর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে, তাঁর মলমূত্র সংগ্রহ করে, তারপর সিল করে রাশিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ব্যবস্থা নেওয়া হয় বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যাতে তাঁর স্বাস্থ্যের বিশ্লেষণ করতে না পারে।
দেহরক্ষীরা তাঁর বর্জ্য সংগ্রহ করে একটি সিল করা ব্রিফকেসে (স্যুটকেস) রাখেন, যা মস্কোয় ফেরত যায়। ২০১৭ সালে ফ্রান্স সফর, ২০১৯ সালে সৌদি আরব সফর এবং সাম্প্রতিক আলাস্কা সম্মেলনের সময়ও এই প্রথা দেখা গেছে।
বিবিসির সাবেক সাংবাদিক ফরিদা রুস্তামোভা বলেন, পুতিন বিদেশ সফরে ব্যক্তিগত বাথরুম ব্যবহার করেন। এ কারণে যেকোনো দেশে সফরের সময় একটি পোর্টেবল টয়লেটও নিয়ে যাওয়া হয়। ফরিদা রুস্তামোভা জানান, ১৯৯৯ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই প্রথা অনুসরণ করছেন।
উল্লেখ্য, পুতিনের আসন্ন ভারত সফর উপলক্ষে নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে নয়াদিল্লি। রাশিয়ার প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের উচ্চ প্রশিক্ষিত কর্মী, ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) সেরা কমান্ডো, স্নাইপার, ড্রোন, জ্যামার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) মনিটরিংসহ সব মিলিয়ে একটি পাঁচ-স্তরীয় নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে।