নরসিংদীর বেলাবতে স্ত্রীর নামে এনজিও থেকে এবং স্বজনদের নিকট থেকে নেওয়া ঋণের চাপ থেকে মুক্তি, জুয়া খেলার টাকা না থাকা ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই দুই সন্তানসহ স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান।
এর আগে গতকাল সোমবার বিকেলে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুল হকের আদালতে মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ।
আদালতে জবানবন্দিতে আসামির দেওয়া বিস্তারিত তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন পিবিআইয়ের এসপি এনায়েত হোসেন মান্নান। এ সময় তিনি জানান, পেশায় রং মিস্ত্রি ভাবলা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন শেখ একজন পেশাদার জুয়াড়ি। জুয়া খেলার টাকার সংকট হলে তাঁর মাথা ঠিক থাকে না। বিভিন্ন এনজিওসহ শ্যালক, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে স্ত্রী রহিমার নামে করা ১২ লাখ টাকা ঋণ নেন। এর বিপরীতে সপ্তাহে ও মাসে ২২ হাজার টাকার মতো কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হতো তাঁকে। ঋণগ্রহীতা মারা গেলে ঋণের টাকা মওকুফ হয় এমন বিশ্বাসে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্বামী গিয়াস। পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার গভীর রাতে ছুরিকাঘাত ও ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে ঘুমন্ত স্ত্রী রহিমা বেগমকে হত্যা করেন তিনি। পরে রাতে তাঁর বাড়িতে অবস্থানের কথা সন্তানেরা বলে দেবে এমন আশঙ্কায় ঘুমন্ত সন্তানদেরও ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এরপর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি।
সকালে স্বজনদের ফোনে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে বাড়ি ফেরেন এবং রাতে বাড়িতে ছিলেন না বলে জানান গিয়াস উদ্দিন। এ সময় প্রতিপক্ষ চাচাতো ভাই রেনু শেখের ওপর হত্যার দায় চাপানোর চেষ্টা করেন তিনি। রেনু শেখের সঙ্গে বাড়ির রাস্তার সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছিল তাঁর।
এদিকে রোববার রাতে নিহত রহিমা বেগমের ভাই মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে বেলাব থানায় হত্যা মামলা করেন। হত্যার দায় স্বীকারের পর ওই মামলায় গিয়াস উদ্দিন শেখকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। এই হত্যা মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, এক নারীর সঙ্গে ফোনে গিয়াস উদ্দিন শেখের নিয়মিত কথা বলার তথ্যও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঋণের তথ্য যাচাইসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে আরও কেউ এই নির্মম হত্যার সঙ্গে জড়িত কী না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।