সিলেটের ছাতকের বাসিন্দা খুশি বেগম। দুবছর আগে মোবাইল ফোনে ইউসুফ নামের এক লন্ডনপ্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। প্রবাসে থাকা অবস্থায় পারিবারিকভাবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুশিকে বিয়ে করেন ইউসুফ। দুই বছর আগে বিয়ে হলেও স্বামীর দেখা পাননি খুশি। ফলে স্বামীর অবর্তমানে একই এলাকার মো. মহিউদ্দিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর প্রেমকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে চাপ দেওয়ায় হত্যার শিকার হন খুশি। নিখোঁজের তিন দিন পর খুশির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের ১৬ দিন পর হত্যার রহস্য উন্মোচনসহ মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মো. মহিউদ্দিন (২২)। আজ শনিবার দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
মুক্তা ধর বলেন, গত ১৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন খুশি বেগম। নিখোঁজের চার দিন পর ২১ নভেম্বর সকালে গ্রামের একটি ধানখেতে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় খুশি বেগমের মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন তাঁর বাড়িতে খবর দেন। তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি নিখোঁজ খুশির বলে শনাক্ত করেন। স্থানীয় থানা-পুলিশ মরদেহর সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় খুশির বাবা কবির মিয়া অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর সিআইডি ঘটনাটির ছায়াতদন্ত শুরু করে।
বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, সিলেট শহর এলাকার ইউসুফ নামের এক লন্ডনপ্রবাসীর সঙ্গে প্রায় দুই বছর আগে পরিবারের সম্মতিতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী খুশি বেগমের বিয়ে হয়। স্বামীর অবর্তমানে একই এলাকার মহিউদ্দিনের সঙ্গে খুশি বেগমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মহিউদ্দিন খারগাঁও হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে ২০১৮ সালে হেফজ্ পাস করে দুই বছর বেকার ছিলেন।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মহিউদ্দিনের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। পরে এলআইসির একটি টিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত মহিউদ্দিনকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার কেডিএস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মহিউদ্দিন হত্যার কথা স্বীকার করে সিআইডি কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে নিহত খুশি বেগমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বেশ কিছুদিন ধরে খুশি তাঁকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। মহিউদ্দিন বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি পরিবার ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে প্রকাশ করার কথা বলেন। তখন মহিউদ্দিন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ১৭ নভেম্বর রাতের বেলা খুশিকে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে পার্শ্ববর্তী ধানখেতে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কেউ জড়িত কি না, এবং এই কাজে পরোক্ষভাবেও কেউ সহযোগিতা করেছে কি না, এসব বিষয় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।