মাদারীপুর জেলার শিবচরে পূর্ব শ্যামাইল গ্রামে কুপিয়ে হত্যা করা দাদন চোকদারের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রতিপক্ষের হাতে পিতা নিহতের পর থেকে তিন বোনের চোখে ঘুম নেই। তিন মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা নিহত দাদনের স্ত্রী রুবি বেগম। পরিবারের কর্তাকে হারিয়ে দুবেলা খাওয়া নিয়েও সংকটে পুরো পরিবার।
নিহত দাদন চোকদারের বড় মেয়ে সোহাগী আক্তার সুস্মিতা বলেন, 'ঘরে খাবার নাই—চাল নাই, ডাল নাই। স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা—বেতনের টাকা নাই। আমরা কোথায় যামু। আমার আব্বারে ওরা কুপাইয়া মাইরা ফেলল! আমরা কেমন করে বাঁচব।'
গত ২৩ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে শিবচর বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষের বাড়ির কাছে পৌঁছালে অভিযুক্ত নজরুল শেখ, সেলিম শেখসহ অন্যরা পূর্বশত্রুতার জেরে মৎস্যজীবী দাদন চোকদারের ওপর হামলা করে। কুপিয়ে তাঁর বাঁ পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। বুকে ও মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। পরে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত দাদন চোকদার উপজেলার পৌরসভাধীন পূর্ব শ্যামাইল (সাবেক শিবচর ইউনিয়ন) গ্রামের মৃত আদম চোকদারের ছেলে।
শিবচর থানা সূত্রে জানা যায়, ময়নাতদন্তের পর বুধবার জানাজা শেষে নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহতের ভাই পান্নু চোকদার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ১৩ জন আসামির নাম উল্লেখ করে এবং ১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা করে শিবচর থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহত দাদন শিকদারের স্ত্রী রুবি বেগম বলেন, 'এই বাড়ি ছাড়া আমাদের আর কিছুই নাই। আমার স্বামী যখন যে কাজ পাইত তা করেই সংসার চালাত। আমার স্বামীরে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে মাইরা ফেলল। এখন ছোট ছোট বাচ্চা নিয়া কোথায় যামু? কে আমার বাঁচ্চাদের পড়ালেখার খরচ দেবে? কে আমাদের দেখবে? আমরা গরিব মানুষ। প্রকাশ্যে যারা আমার স্বামীকে হত্যা করল, তাদের বিচার কি হবে না?'
মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই পান্নু চোকদার বাদী হয়ে নজরুল শেখকে প্রধান আসামি করে শিবচর থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।