গাজীপুরের শ্রীপুরে মাহফুজ ফরাজী (১৭) নামের এক স্কুলছাত্রকে তুলে নিয়ে হত্যার পর দুর্ঘটনার নাটক সাজানোর অভিযোগ তুলেছেন তার স্বজনেরা। এর প্রতিবাদ জানিয়ে অপরাধীদের বিচার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করা হয়েছে। উপজেলার মাওনা এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে শত শত নারী-পুরুষ-শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদীঘি গ্রামের সিংগারদীঘি স্কুল সড়কে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। কর্মসূচিতে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শিক্ষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি, সাধারণ নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
মাহফুজ ফরাজী উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদীঘি গ্রামের মো. ফজলুল হক ফরাজীর ছেলে। সে প্লেজ হারবার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। আর অভিযুক্ত তৌফিক (২২) তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। বাকি তিনজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সিংগারদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সরফুল আলম বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমাদের একজন মেধাবী ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর এটি একটি দুর্ঘটনা বলে নাটক সাজানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা দাবি করছি।’
সিংগারদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রুপা বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের একজন বড় ভাইকে সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে খুন করেছে। আমরা খুনির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করছি।’
মাহফুজ ফরাজী মা রুমানা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেকে ওরা রাতের খাবার শেষ করার আগেই সুকৌশলে ডেকে নেয়। এক ঘণ্টা পর তার লাশ পাওয়া যায়। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’
তিনি বলেন, ‘দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর থেকে আমি থানা-পুলিশের ধারে ধারে ঘুরেও মামলা করতে পারছি না। পুলিশ আমাকে শুধু ঘোরাচ্ছে।’
ফজলুল হক বলেন, ‘অভিযুক্ত তৌফিক মাঝেমধ্যে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসত। সে খারাপ ছেলে বলে আমি একাধিকবার তাকে আমার বাড়িতে না আসতে বলেছি। ইতিমধ্যে আমার ছেলে স্কলারশিপ পেয়ে কানাডায় যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ করে। বিষয়টি জানতে পেরে তৌফিক আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পরিকল্পিতভাবে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যার পর দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছে। প্রাইভেট গাড়িতে চালকসহ পাঁচজন থাকলেও শুধু আমার ছেলে মারা গেছে। বাকি চারজন কোনো আঘাত পায়নি। ঘটনার পর থেকে তাদের কোনো খোঁজখবর নেই।’
মানববন্ধনে মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, ‘ছেলেটিকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হলো। এর কোনো বিচার আমরা পাচ্ছি না। ঘটনার পরপরই আমি নিহতের বড় ভাইকে নিয়ে শ্রীপুর থানার ওসির কাছে যাই সাধারণ ডায়েরি করার জন্য। কিন্তু পুলিশ সাধারণ ডায়েরি না নিয়ে আমাকে ঘটনাস্থল নির্ধারণের কথা বলে। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দিতে কাজ করছে বলে আমাদের সন্দেহ।’
অভিযুক্ত তৌফিকের বাবা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাইনি। পরে মাহফুজ ফরাজীকে গুরুতর আহত অবস্থায় মাওনা চৌরাস্তা এলাকার একটি হাসপাতালের সামনে পাই। আমার ছেলেকে আহত অবস্থায় এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই স্কুলছাত্রের স্বজনেরা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাদের ঘটনাস্থল নির্ধারণ করতে বলেছি। ঘটনাস্থল নির্ধারণের পর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’