হংকংয়ের আবাসিক ভবন কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ জনে। হংকংয়ের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ জানিয়েছে, শহরটিতে আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আজ শুক্রবারের মধ্যেই অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শেষ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভয়াবহ এই আগুনে এক বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স পুড়ে গেছে। এই দুর্ঘটনায় এখনো নিখোঁজ অনেকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, দমকলকর্মীরা ইতিমধ্যে আগুনের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। আগুনে ধ্বংস হয়ে যায় তাই পো জেলার উত্তরাংশে অবস্থিত ওয়াং ফুক কোর্ট আবাসিক কমপ্লেক্সটি। আটটি টাওয়ার নিয়ে গঠিত ওই আবাসনে ৪ হাজার ৬০০-এর বেশি মানুষ থাকত। ভবনটিতে সংস্কারকাজ চলছিল এবং আগুন লাগার সময় এটি বাঁশের মাচা আর সবুজ জালের আচ্ছাদনে ঢাকা ছিল। সেখান থেকেই বুধবার দুপুরে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, জানালা বন্ধ করে রাখা দাহ্য ফোম বোর্ডসহ অনিরাপদ নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মৃত্যুর কারণ ঘটানোর অভিযোগে তদন্ত চলছে। শুক্রবার সকালেও দমকলকর্মীরা ধোঁয়া ওঠা ভবনটিতে কাজ করছিলেন।
হংকংয়ের ডেপুটি ফায়ার সার্ভিসেস ডিরেক্টর ডেরেক চ্যান বলেন, ‘সাতটি ভবনের সবগুলো ইউনিটে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা চলছে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় আর কোনো হতাহতের ঘটনা আছে কি না।’ তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে নিখোঁজের সংখ্যা ছিল ২৭৯। তবে সেই সংখ্যা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হালনাগাদ হয়নি। চ্যান জানান, ফায়ার ডিপার্টমেন্টে করা ২৫টি জরুরি উদ্ধার কল এখনো সমাধান হয়নি, যার মধ্যে সাম্প্রতিক কয়েকটি কলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
উদ্ধারকর্মীদের তীব্র তাপ, ঘন ধোঁয়া, ধসে পড়া বাঁশের মাচা ও ধ্বংসস্তূপ ভেদ করে ওপরের তলাগুলোতে আটকে পড়া মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য লড়াই করতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক মর্মাহত মা, হাতে মেয়ের গ্র্যাজুয়েশন ছবি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে মেয়েকে খুঁজছিলেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯০০ বাসিন্দা অবস্থান করছিলেন। ওই মা বলেন, ‘সে আর তার বাবা এখনো বের হয়নি। ওরা আমাদের ভবন বাঁচানোর মতো পানি পায়নি।’
চ্যান বলেন, সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে কমপ্লেক্সের দুটি টাওয়ারে। তবে কয়েকটি ভবনে জীবিত বাসিন্দাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
শুক্রবার সকালে হসপিটাল অথরিটি জানায়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক, তাঁরা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। হংকংয়ে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার অভিবাসী গৃহকর্মী আছেন, যাঁদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের এশীয় দেশ থেকে আসা নারী। তাঁরা সাধারণত নিয়োগকারীর সঙ্গে থাকেন।
১৯৪৮ সালে একটি গুদামে আগুনে ১৭৬ জন মারা যাওয়ার পর থেকে এটাই হংকংয়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড। ঘটনাটি ২০১৭ সালের লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে, যেখানে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই দুর্ঘটনার জন্য দাহ্য বহিরাবরণ এবং নির্মাণ ও সরকারি তদারকির ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছিল।
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি ঘোষণা করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তায় সরকার ৩০ কোটি হংকং ডলারের (৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) একটি তহবিল গঠন করবে। পাশাপাশি চীনের বড় বড় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোও অনুদান ঘোষণা করেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি হংকং। উঁচু উঁচু আবাসিক ভবনে ভরা এই শহরে আকাশচুম্বী বাড়িভাড়া দীর্ঘদিন ধরে জন-অসন্তোষের উৎস। এই ট্র্যাজেডি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ বাড়াতে পারে। হংকং সরকার ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা দ্রুত পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ঘটনাটি আধা স্বশাসিত অঞ্চলের ওপর বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণের এক সম্ভাব্য পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।