হংকংয়ে বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান চলছে। এরই মধ্যে শহরটির নির্মাণ শিল্পের বহু পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী উপাদান বাঁশের মাচা বর্তমানে তীব্র বিতর্কের কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বহুতল আবাসিক ভবনগুলোর সুরক্ষা মান নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠছে, তখন এই ঐতিহ্যবাহী উপকরণের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, কেবল বাঁশের মাচা নয়, বরং এর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য দাহ্য সামগ্রী আগুনের দ্রুত বিস্তারে অনুঘটকের কাজ করেছে। ভবনগুলোর বাইরে লাগানো মেশ নেট (সাধারণত পলিমারের জাল), প্লাস্টিকের শিট বা কাগজ এবং ক্যানভাসের শিটগুলোতে আগুন দ্রুত ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকগুলোর কিছু জানালা ঢেকে করে রাখা ‘অত্যন্ত দাহ্য’ স্টাইরোফোম বোর্ডগুলো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। মনে করা হচ্ছে, এই স্টাইরোফোম বোর্ডের কারণে বাঁশের কাঠামোয় আগুন আরও সহজে এবং দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল।
যদিও অনলাইনে বহু হংকংবাসী এই বহুল ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ সামগ্রীর নিরাপত্তা নিয়ে জোরালোভাবে কথা বলছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন ভিডিওতে তাঁরা দেখানোর চেষ্টা করছেন, বাঁশের নিজস্ব একটি অগ্নি-প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে এবং এর চেয়ে বরং নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত সিনথেটিক জাল (মেশ নেট) বা প্লাস্টিকের আবরণই বেশি দাহ্য। বহু পুরোনো এই পদ্ধতিটি (বাঁশের মাচা) এর খরচ-সাশ্রয়, দ্রুত স্থাপন যোগ্যতা এবং স্থানীয় সংস্কৃতিতে এর গুরুত্বের কারণে নির্মাণশিল্পে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এই বিপর্যয়ের আগেই কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা উদ্বেগগুলো বিবেচনা করে আরও মজবুত, আগুন-প্রতিরোধী ইস্পাতের কাঠামো ব্যবহারের পক্ষে বাঁশের মাচা পর্যায়ক্রমে বাতিল করার জন্য সরকারই প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। এই ভয়াবহ ঘটনার পর সেই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হয়েছে। হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি জানিয়েছেন, সরকার বাঁশের মাচার বদলে ধাতব কাঠামো ব্যবহারের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।
তবে এই পরিবর্তনে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকদের অনেকে দাবি করছেন, স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ পদ্ধতির পরিবর্তন এবং ইস্পাতের ব্যবহার বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তটি শুধু চীনের মূল ভূখণ্ডের বৃহৎ ইস্পাত শিল্পের অর্থনৈতিক স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এতে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।