১০ বছর পেরিয়ে গেলেও রামু বৌদ্ধমন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৮ মামলার একটিরও বিচার শেষ হয়নি। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইসলাম ধর্ম অবমাননার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়ানোকে কেন্দ্র করে রামু উপজেলার ১৯টি প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির ও প্রায় ২৬টি বসতঘরে একসঙ্গে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়। পাশাপাশি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় মন্দির ও বৌদ্ধদের ঘরবাড়ি।
ওই সাম্প্রদায়িক হামলার ১০ বছরে রামুতে বৌদ্ধ-মুসলিম সম্প্রদায়ে সম্প্রীতি ফিরলেও মুছে যায়নি মনের ক্ষত। ওই দিনের হামলার ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা করা হয়েছিল। এতে এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরপর আপসের ভিত্তিতে একটি মামলা প্রত্যাহার করা হলেও ১৮টি মামলায় ৯৯৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে আটকে গেছে মামলার বিচারকাজ।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের বেশ কিছু ছবি-ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকলেও অভিযোগপত্রে অনেকের নাম বাদ পড়েছে। রামু বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনায় করা মামলার মূল অভিযুক্তদের বেশির ভাগ মানুষ জামিনে, কেউ কেউ ধরাছোঁয়ার বাইরে বেরিয়ে গেছেন। এই সাম্প্রদায়িক হামলার মূল অভিযুক্ত রামু ফকিরা বাজারের ফারুক কম্পিউটারের ফারুক ও আলিফ মুক্তাদিলও জামিনে রয়েছেন।
প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বরের বিভীষিকাময় কালো রাতকে স্মরণ করতে স্থানীয় বিভিন্ন বৌদ্ধ সংগঠন আয়োজন করে সংঘদান ও শান্তি শোভাযাত্রার। প্রতিবছর এই দিনে বিচারের দাবিতে স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন জড়ো হন।
এ বিষয়ে ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ পরিবারের এক শিক্ষক সুমথ বড়ুয়া বলেন, ‘নিজের চোখের সামনে নিজেদের ঘরবাড়িতে হামলা ও লুটপাট হতে দেখেছি। সেদিন পাশের অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের পরিবার আবার আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। কোনো কিছুরই বিচার এই গত ১০ বছরে হলো না। এই সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার হলে দেশে অন্য হামলার ঘটনা হয়তো ঘটত না। আজও রাতে ওই দিনের কথা মনে হলে আঁতকে উঠি।’
রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া আব্বু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি মামলার বিচারও এখনো হয়নি। আদৌ এসব মামলার বিচার হবে কি না, সন্দেহ আছে। যারা মন্দির হামলায় জড়িত, চোখের সামনে তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
হামলার ঘটনায় হওয়া ১৮ মামলার পরিস্থিতি জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাক্ষীর অভাবেই মূলত মামলাগুলো ঝুলে আছে। এসব মামলার বেশির ভাগ সাক্ষী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। মামলার দিনে অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেন না।’