বাম দলগুলোর হুঁশিয়ারি
চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল এবং মোংলা বন্দর কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ও দেশবিরোধী চুক্তি থেকে ফিরে না এলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশের বামপন্থী দলগুলোর দুটি জোটের নেতারা। এরই মধ্যে আগামী ৮ নভেম্বর চট্টগ্রামে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনসংলগ্ন জিপিও মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অভিমুখে এ কর্মসূচির আয়োজন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা। এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শুরু করেন দুই জোটের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয় অভিমুখে গেলে জিপিও মোড়ে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে সেখানেই সমাবেশ করেন তাঁরা।
সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সরকার একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। তার অংশ হিসেবে সরকার ঘোষণা করেছে, চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল এবং মোংলা বন্দর কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই সে চুক্তি সম্পাদন তাঁরা করতে চান। শেখ হাসিনার সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষা করত। সে কারণেই তাকে উচ্ছেদের জন্য গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। তার অংশ হিসেবে বন্দর ইজারা দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে।
সরকারকে হুঁশিয়ার করে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, এখনো সময় আছে। দেশবিরোধী চুক্তি থেকে ফিরে না এলে এ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান হবে।
বজলুর রশীদ জানান, সরকার বর্তমান সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে আগামী ৮ নভেম্বর বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চাসহ অপরাপর বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলো চট্টগ্রামে সমাবেশ করবে। এরপরও সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন-হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোর একজন নেতা-কর্মী জীবিত থাকতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে কোনোভাবেই বিকিয়ে যেতে দেওয়া হবে না।
গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ডিপি ওয়ার্ল্ড বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছিল, সেখানে তাদের অনেক বদনাম হয়েছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভূঁইয়া, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ। উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন ও রুহিন হোসেন প্রিন্স।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, বঙ্গোপসাগর আজ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একটা যুদ্ধক্ষেত্রের মহড়া দেওয়ার জায়গা হিসেবে তৈরি হচ্ছে। আর বাংলাদেশকে সে যুদ্ধক্ষেত্রের একটা পটভূমি তৈরি করার কাজ করছে বর্তমান ইউনূস সরকার। বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব নানা ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়বে। এই সরকারের সে এখতিয়ার নেই।