নূর ভবনের চারতলার বাসায় পড়ার টেবিলটা খালি পড়ে আছে। বসার জায়গার একপাশে পানিভর্তি বাবল গান। খুব পছন্দের খেলনা ছিল এটি। সারাক্ষণ ঘর মাতিয়ে রাখত। আজ আট দিন হলো সে নেই। তার অনুপস্থিতির বিষণ্নতা ছড়িয়ে আছে ঘরময়। জেঁকে আছে সুনসান নীরবতা।
মা বিবি ফাতেমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারও। মেয়ের খেলনা, বই ও স্কুলের ইউনিফর্ম জড়িয়ে শুধু বিলাপ করে যাচ্ছেন। বিলাপ করে বলছিলেন, অবুঝ শিশুটিকে ওই নরপশু যেভাবে কষ্ট দিয়ে মেরেছে, তাকেও যদি সেভাবে মারতে পারতেন!
বিবি ফাতেমা নগরীর পাহাড়তলীর সরাইপাগা এলাকায় ধর্ষণের পর হত্যার শিকার শিশু আবিদা সুলতানা আইনীর (১০) মা। গত ২৯ মার্চ ওই শিশুর বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার করে পিবিআই।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পাহাড়তলী সরাইপাড়া এলাকার নূর ভবনের চারতলায় কথা হয় আইনীর মা ফাতেমার সঙ্গে। তিনি অলংকার মোড়ে একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। আইনীর বাবা মো. আলম থাকেন ঢাকায়। তিনিও সেখানে গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন।
মা ফাতেমা জানান, আইনী সরাইপাড়া হাজী আব্দুল আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। খুব মেধাবী ছিল। আগে পড়ত হলি ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। সেখানে রোল নম্বর ছিল দুই। বাবা-মার স্বপ্ন ছিল, মেয়েটিকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবেন। দুজনেই গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করে প্রতি মাসে মেয়ের জন্য কিছু টাকা জমাতেন।
গত ২১ মার্চ আইনী যেদিন নিখোঁজ হয়, এর আগের দিন অসুস্থ থাকায় স্কুলে যায়নি। ওই দিন মায়ের কাছে এবারের ঈদে দুটি পোশাক নিতে চেয়েছিল। পারলারে কান ফোড়ানো আর কানের দুল কিনে দেওয়ারও আবদার করেছিল।
ড্রয়িং রুমের ইলেকট্রিক বাল্বের দিকে দেখিয়ে ফাতেমা বলেন, ‘দেখেন দেখেন, বাতিটি নিভু নিভু না! মেয়ে আমার অতিরিক্ত উজ্জ্বল বাতি পছন্দ করত না। তার নাকি চোখ কামড়াতো। সে জন্য কম আলোর বাতি লাগিয়েছিলাম।’
আইনীর মাকে দেখতে আসেন তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘাতক রুবেলের ফাঁসি চাই। সে জামিন নিয়ে বের যেন না হতে পারে। কারণ বের হলে আবারও অনেক মায়ের বুক খালি করবে।’