হোম > বিশ্ব > এশিয়া

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

বাবা সাজিদ আকরাম ও ছেলে নাভিদ আকরাম। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসব চলাকালে প্রাণঘাতী হামলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, হামলাকারী দুজন সম্পর্কে বাবা ও ছেলে।

পুলিশ জানায়, হামলাকারীরা হলেন ৫০ বছর বয়সী সাজিদ আকরাম ও তাঁর ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ আকরাম। সাজিদ আকরাম পেশায় ফলবিক্রেতা ও নাভিদ পড়া শেষে এখন কিছু করছিলেন না।

সাজিদ ঘটনাস্থলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। অন্যদিকে নাভিদকে আটক করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি গুরুতর হলেও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন।

পুলিশের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দুজন হামলাকারী ভিড়ের ওপর দীর্ঘনল বন্দুক ব্যবহার করে গুলি চালান। সাজিদ আকরামের নামে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্রের বৈধ লাইসেন্স ছিল। হামলায় এসব অস্ত্রই ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।

দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দুজন পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, তাঁরা দক্ষিণ উপকূলে মাছ ধরতে যাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক জানান, সাজিদ আকরাম ১৯৯৮ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখেন। ২০০১ সালে সেটি পার্টনার ভিসায় রূপান্তরিত হয়। এরপর থেকে রেসিডেন্ট রিটার্ন ভিসাতে দেশটিতে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।

নাভিদের মা ভেরেনা জানান, গুলির ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে রোববার সকালে ছেলে শেষবারের মতো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি বলেন, ‘ও আমাকে ফোন করে বলেছিল, মা, আমি একটু সাঁতার কেটেছি। স্কুবা ডাইভিং করেছি। আমরা এখন খেতে যাচ্ছি। আজ খুব গরম। বাড়িতেই থাকব।’

ভেরেনা আরও জানান, ছেলে তাঁকে বলেছিল, বাবার সঙ্গে জারভিস বে এলাকায় আছে।

ঘটনাস্থলের ছবিতে ছেলেকে শনাক্ত করতে পারেননি ভেরেনা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সহিংসতা বা উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছেলের জড়িত থাকার কথা তিনি বিশ্বাস করেন না।

ভেরেনা বলেন, ‘ওর কাছে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নেই। ও বাইরে ঘোরাফেরা করে না। বন্ধুদের সঙ্গে মেশে না। মদ্যপান করে না, ধূমপান করে না, খারাপ জায়গায় যায় না। ও শুধু কাজে যায়, বাড়ি ফেরে, শরীরচর্চা করে, এই পর্যন্তই।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে কেউ এমন একজন ছেলেই চাইবে। আমার ছেলে খুব ভালো।’

দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাভিদ আকরাম পেশায় একজন ইটশ্রমিক ছিলেন। তবে প্রায় দুই মাস আগে তাঁর কর্মস্থল দেউলিয়া হয়ে পড়ায় তিনি চাকরি হারান। এরপর থেকে নাভিদ নতুন কাজের খোঁজ করছিলেন বলে জানান তাঁর মা।

ভেরেনা আরও জানান, তাঁর ছেলে ক্যাব্রামাটা হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছে। তিনি বলেন, ‘নাভিদ খুব একটা মিশুক ছিল না এবং অনলাইনে বেশি সময় কাটাত বলেও মনে হয়নি। তাঁর শখের মধ্যে ছিল মাছ ধরা, স্কুবা ডাইভিং, সাঁতার কাটা ও শরীরচর্চা।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২০২২ সালের একটি পোস্টে নাভিদ আকরামকে ট্যাগ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, তিনি পশ্চিম সিডনির হেকেনবার্গে অবস্থিত আল-মুরাদ ইনস্টিটিউট থেকে কোরআন শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন।

২০০৪ সালে কেনা তিন কক্ষের একটি বাড়িতে বসবাস পরিবারটির। এর আগে ক্যাব্রামাটায় থাকত তারা। ওই বাড়িতে বাবা–মা, ২২ বছর বয়সী এক বোন ও ২০ বছর বয়সী এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন নাভিদ। তাঁর মা গৃহিণী।

গত রোববার অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে পরিচিত সার্ফিং সৈকতে এই গুলির ঘটনা ঘটে। দেশটির সমুদ্রপ্রেমের প্রতীক হিসেবে পরিচিত পর্যটনকেন্দ্রটিতে হঠাৎ এই হামলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ছিল ১০ বছরের এক কন্যাশিশু। সে একটি শিশু হাসপাতালে মারা যায়। সবচেয়ে বেশি বয়সী নিহত ব্যক্তির বয়স ছিল ৮৭ বছর।

এ ঘটনায় আরও ৪২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।

বন্ডাই বিচ ট্র্যাজেডি: ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্টে ফিলিপাইনে গিয়েছিল হামলাকারী বাবা-ছেলে

বন্ডাই বিচের ঘটনায় বদলে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়ার অস্ত্র-আইন

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মুখে ধনকুবের থেকে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের মুখ জিমি লাই

ফুল, প্রশংসা আর ডলারে ভাসছেন বন্ডাই বিচের ‘নায়ক’ আল-আহমেদ

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

অং সান সু চি হয়তো মারা গেছে, আশঙ্কা ছেলের

অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০ জনেরও বেশি

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

বন্ডাই বিচে গুলির শব্দকে শুরুতে আতশবাজি ভেবেছিলেন অনেকে