মিয়ানমারের বন্দী সাবেক নেত্রী ও নোবেলজয়ী অং সান সু চি জীবিত ও সুস্থ আছেন—এমন দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে দেশটির সামরিক জান্তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তাঁর ছেলে কিম অ্যারিস। এর আগে দুই বছরের বেশি সময় ধরে মায়ের কোনো ছবি, কণ্ঠ বা সরাসরি খোঁজ না পাওয়ায় সম্প্রতি তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মায়ের বেঁচে থাকা নিয়ে কিম অ্যারিসের সাম্প্রতিক উদ্বেগের পর মিয়ানমারের সামরিক সরকার একটি বিরল বিবৃতিতে জানায়—অং সান সু চি সুস্থ আছেন। তবে মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘মিয়ানমার ডিজিটাল নিউজ’-এ প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে সু চির স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য, ছবি বা চিকিৎসা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এতে অ্যারিসের উদ্বেগ আরও বেড়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
রয়টার্সকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় কিম অ্যারিস বলেন, সামরিক বাহিনী সু চির সুস্থতার দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দিচ্ছে না। এমনকি তাঁর কাছে পরিবার, চিকিৎসক বা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও প্রবেশাধিকার নেই। অ্যারিস বলেন, ‘তিনি যদি সত্যিই সুস্থ থাকেন, তাহলে সেটি প্রমাণ করা তাদের জন্য কঠিন হওয়ার কথা নয়।’
জাপানে অবস্থানকালে অ্যারিস তাঁর মায়ের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি করেন এবং সামরিক সরকারের পরিকল্পিত নির্বাচনকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেন। সমালোচকদের মতে, এই নির্বাচন জান্তার ক্ষমতা বৈধ করার কৌশল। মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে সন্দেহের বিষয়ে অ্যারিস জানান, দীর্ঘদিনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় তাঁর আশঙ্কা চরমে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে, তিনি হয়তো মারা গিয়েও থাকতে পারেন।’
অ্যারিসের দাবি, দুই বছরের বেশি সময় ধরে সু চিকে কেউ দেখেনি, এমনকি তাঁর আইনজীবীদেরও সঙ্গেও যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
২০২০ সালের নির্বাচনের পর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী। এরপর দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বর্তমানে সু চি ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন—যা আগে ৩৩ বছর ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নির্বাচন জালিয়াতি, রাষ্ট্রদ্রোহ, করোনা বিধি ভঙ্গ, অবৈধ যোগাযোগ সরঞ্জাম রাখা এবং রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ব্যাপক সমালোচিত।
জান্তা দাবি করেছে, অ্যারিসের বক্তব্য ‘মনগড়া’ এবং আসন্ন নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটানোই এর উদ্দেশ্য। তবে বুধবার অ্যারিস স্পষ্ট করে জানান, মিয়ানমারের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা, গোপনীয়তা ও নীরবতায় যে কোনো সন্তানেরই ভয় বাড়ে।’