হোম > অপরাধ

ভয়ংকর মাদক আইস পাচারে ইয়াবা কারবারের হোতারা

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা

কক্সবাজারে ভয়ংকর মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথের বড় চালান ধরা পড়ছে একের পর এক। সব চালানই থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমার হয়ে দেশে ঢুকছে। টেকনাফ সীমান্তপথে দেশে ঢোকার পর এই মাদক মজুত করা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে।

মাদক নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত একাধিক সংস্থার কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা কারবারের হোতা বা পৃষ্ঠপোষকেরাই আগের কারবার ছেড়ে আইস পাচারে জড়িয়েছেন। ফলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই তাঁরা নতুন কারবার চালিয়ে যেতে পারছেন। তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রমতে, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে নাফ নদী পেরিয়ে আইসের চালান আসছে কক্সবাজারের টেকনাফে। মিয়ানমারের আইস কারবারি চক্রের হোতা লেদার মাধ্যমে দুই বছর ধরে নৌকাভর্তি কয়েকটি চালান এসেছে। স্থানীয় হারেজ, জাফর, তারেক, আশিকসহ জামিনে থাকা কারবারিদের মাধ্যমে সীমান্ত দিয়ে তা দেশে ঢুকছে। এরপর মজুত করা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখান থেকেই মাদক কারবারের পৃষ্ঠপোষকেরা কারবারিদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে ধাপে ধাপে বিক্রি করছেন।

বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মাদকের কয়েকটি চালান জব্দ করার ঘটনায় পাচারের সঙ্গে মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে এসেছে। রোহিঙ্গাদের এই দুই দেশে নেটওয়ার্ক থাকায় এই মাদক চোরাচালান তাদের জন্য সহজ হয়ে উঠছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মজুত যেভাবে
র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে জব্দ করা আইসের চালানটি মিয়ানমার থেকে এনে সীমান্তের নিকটবর্তী গোপন স্থানে রাখা হয়েছিল। পরে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ও নৌপথ ব্যবহার করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরসহ দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর সুবিধাজনক সময়ে শরীরের সঙ্গে বেঁধে, গাড়িতে লুকিয়ে বা নানা কৌশলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সরবরাহ করার চেষ্টা চলছিল।

সূত্রমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইস মজুত চক্রের নিয়ন্ত্রক মুন্না গ্রুপ। এই গ্রুপের ১০-১২ জন সদস্য বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকেন। তারাই মোটাদাগে দেশি কারবারিদের কাছে বিক্রি করছে। তবে এখনো এই মুন্না গ্রুপের সদস্যদের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি।

র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুই বছর ধরে মিয়ানমার থেকে আইসের চালান বেশি আসছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আইসের চালানগুলো কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এজেন্টদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কারবারিদের সব নেটওয়ার্কের ওপর র‍্যাব নজর রাখছে।

সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মিয়ানমারে ৩১টি কারখানায় ইয়াবা তৈরি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বরং ইয়াবা তৈরির জন্য থাইল্যান্ড থেকে আনা অ্যামফিটামিন বা আইস নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে। এই মাদক চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বাজার ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একইভাবে মাদকটি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে কারবারিরা। তবে তরুণদের বাইরে অন্য বয়সের এই মাদকসেবী কম থাকায় এবং দাম বেশি হওয়ায় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ডিএনসির পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ বলেন, ‘ইয়াবার চেয়েও আইস ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করছে। এই মাদকের গতিপথ নিয়ে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

পাচার বাড়ছেই
পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসার সময় ইয়াবা ও আইসের পাঁচটির বেশি বড় চালান জব্দ করা হয়েছে। গত ১৫ দিনে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্ত থেকে র‍্যাবের হাতে ২৪ দশমিক ২ কেজি এবং বিজিবির হাতে ২১ কেজি ৯০ গ্রাম আইস ধরা পড়েছে।
ডিএনসি বলছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ধরা পড়েছে ৬৬ কেজি আইস। ২০২২ সালে ধরা পড়ে ১১৩ কেজি ৩৩১ গ্রাম। ২০২১ সালে উদ্ধার করা হয় ৩৬ কেজি ৭৯৪ গ্রাম।

যদিও জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধবিষয়ক সংস্থার (ইউএনওডিসি) দাবি, বাজারে যত মাদক ঢোকে, তার মাত্র ১০ শতাংশ উদ্ধার করা হয়। 
কক্সবাজারের রামুর বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদি হোসাইন কবির জানান, এ বছর এ পর্যন্ত তাঁরা ৩৫ কেজি আইস জব্দ করেছেন। গত বছর শুধু বিজিবিই প্রায় ১৫০ কেজি ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করেছিল।

পৃষ্ঠপোষকেরা আড়ালে
সম্প্রতি কক্সবাজারে ইয়াবা কারবারিদের নতুন একটি তালিকা নিয়ে হুলুস্থুল পড়েছে। তালিকায় থাকা দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা একই সঙ্গে ইয়াবা ও আইস চোরাচালানে জড়িত। এর গডফাদার বা পৃষ্ঠপোষকেরা কখনোই শাস্তির আওতায় আসে না। আড়ালে থেকেই মাদক কারবারে মদদ দিয়ে যায়। ধরা না পড়ার কারণ জানতে চাইলে ডিএনসির গোয়েন্দা শাখার উপপরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, আইন অনুযায়ী মাদকসংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনে যিনি অর্থ বিনিয়োগ করেন, সরবরাহ করেন বা সহযোগিতা করেন, তিনি গডফাদার বা পৃষ্ঠপোষক। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, এই ব্যক্তিদের কোনো না কোনো রাজনীতি-সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কেউ কেউ এলাকার জনপ্রতিনিধিও।

সম্প্রতি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা বলছি না গডফাদারদের ধরব না বা ধরতে পারব না। অপরাধী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

অনেক বেশি ক্ষতিকর 
ডিএনসির তথ্যমতে, ইয়াবার চেয়ে ক্রিস্টাল মেথ অনেকগুণ বেশি ক্ষতিকর। ইয়াবায় যেখানে অ্যামফিটামিন থাকে ৫ শতাংশ, সেখানে ক্রিস্টাল মেথের পুরোটাই অ্যামফিটামিন। ফলে এটি মানবদেহে অনেক বেশি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এর ফলে ইউফোরিয়া বা মানসিক বিকারগ্রস্ততা, হৃদ্‌রোগ, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

অতি লোভে তাঁতি নষ্ট: ৬০০ কোটি টাকা হারালেন নওগাঁর ৮০০ জন!

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস ‘সন্ত্রাসী রনি’

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মামুন হত্যার ঘটনায় ২ শুটার শনাক্ত, গ্রেপ্তার যেকোনো সময়

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

বিদেশ থেকে আসা পার্সেলের নামে প্রতারণা, ব্যবসায়ীর ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল তরুণ