হোম > অর্থনীতি

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 

প্রতীকী ছবি

বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের অন্যতম বড় উৎস সঞ্চয়পত্র বিক্রি। কিন্তু চড়া সুদের চাপ কমাতে সরকার সঞ্চয়পত্রের ঋণ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে। মানুষের যাতে সঞ্চয়পত্র কিনতে আগ্রহ কমে, সে জন্য ধাপে ধাপে কমানো হচ্ছে সুদহার। এরই অংশ হিসেবে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে সুদের হার আরও দেড় শতাংশ কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই আলোকে আগামী ডিসেম্বরে নতুন সুদহার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

জানা গেছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমিয়ে ট্রেজারি বিল-বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ধার করা বাড়ানো হয়েছে। কারণ, ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার সঞ্চয়পত্রের তুলনায় কম। এতে সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হলেও বিপাকে পড়ছেন সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর নির্ভরশীল মানুষ, বিশেষ করে অবসরে যাওয়া নাগরিকেরা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা পড়ছে। তবু সুদহার কমানো হচ্ছে, যা বিনিয়োগ-কারীদের নিরুৎসাহিত করবে। এখন সরকার ট্রেজারি বিল-বন্ড থেকে সস্তায় ঋণ পাবে। এতে সরকারি অর্থ সাশ্রয় হবে। এটা সরকারের জন্য ভালো। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জন্য এটি চাপ সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সরকার চলতি বছরের ১ জুলাই জাতীয় সঞ্চয়পত্রের প্রধান স্কিমগুলোর মুনাফার হার ৪৭ থেকে ৫৭ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। তখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে সুদহার ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ করা হয়, যা আগে ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। একইভাবে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সুদহার করা হয় ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা আগে ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। পরিবার সঞ্চয়পত্রের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্তিতে সুদহার ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ করা হয়। আর পেনশনার সঞ্চয়পত্রের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তিতে সুদহার এখন ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সাল থেকে কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হয়েছে। পাশাপাশি আরোপ করা হয়েছে কড়াকড়ি শর্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, উপযোগী হোক বা না হোক, আইএমএফের শর্ত মানতেই সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছে। এতে বয়স্ক, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বঞ্চিত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপে এই শ্রেণির মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। ব্যাংকগুলো বেশি সুদ দেওয়ায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের আগ্রহও কমছে।

সঞ্চয়পত্রে নিরাপদ বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত জুন থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়ে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগামী জানুয়ারিতে ১০ শতাংশের কাছাকাছি নামিয়ে আনা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরি পলিসির নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) ড. এজাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি কমেছে। আবার বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে। সে জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। তারা সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ড কিনছে। এতে সুদহার সাড়ে ৯ শতাংশের কাছাকাছি, যা সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশ কম। সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে সস্তা সুদে ট্রেজারি বিল-বন্ড বেশি হারে কিনছে। অন্যদিকে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রগুলোর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় তার অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে গ্রাহকদের। সব মিলিয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ক্রমেই নেতিবাচক দিকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই মাসে নিট বিক্রি ছিল ২ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে নিট বিক্রি কমেছে ৮৯৪ কোটি টাকা বা ৪১ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিতে যে ঋণাত্মক ধারা চলছে, তা ২০২৪-২৫ ছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল রেকর্ড ২১ হাজার ১২৪ কোটি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের ওপর মানুষের আগ্রহ যাতে ট্রেজারি বন্ড বা বিলে শিফট হয়, সেটি নিয়ে ভাবছে সরকার। এ বিষয়ে কাজ চলছে। মূলত বিকল্প বিনিয়োগের উৎস থাকায় সরকার সঞ্চয়পত্রে ঋণ কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে।’

গত ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেন করা নিলাম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হার ছিল ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১৮২ দিন মেয়াদি বিলের রেট ছিল ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। এর আগে গত ৮ অক্টোবর ২ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছে। আর সুদের হার হ্রাস এবং শর্তের বেড়াজালে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার প্রবণতা কমেছে। নতুন করে সুদ কমালে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ সরিয়ে মানুষ ভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করবে। তখন সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে অর্থ ধার করবে, যার নেতিবাচক প্রভাব বিনিয়োগের ওপর পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক খাত থেকে নিট ঋণ নেওয়া কমে দাঁড়ায় ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। মূলত এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘এখন যেহেতু মূল্যস্ফীতির হার একক অঙ্কে এসে প্রায় ৭ শতাংশে রয়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবে ওই হার কমানো উচিত। না হলে সরকার ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না।’

আরও খবর পড়ুন:

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা শুরু রোববার

প্রশান্ত মহাসাগরে দুই প্রকল্পের অনুমোদন দিল এডিবি-বিশ্বব্যাংক

এক ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে ১৬ কোটি টাকা জরিমানা

১৪টি বন্ধ পাটকল বেসরকারি খাতে, আরও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

মেট্রো রেলস্টেশনে ৯টি সুপারস্টোর চালু করবে এমজিআই

জনতা ব্যাংক পিএলসির ৮৬৬তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত