সাউথইস্ট ব্যাংক পিএলসির সাম্প্রতিক প্রশাসনিক অস্থিরতা, ব্যক্তিগত মানহানি, পরিবারের ওপর অবিচার ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যকে ‘বেপরোয়া সিন্ডিকেটের যাচাই-বাছাইহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মকাণ্ড’ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের এ ধরনের ‘বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে’ ব্যাংকে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের ছেলে রাইয়ান কবির।
রাইয়ান জানান, তাঁর বাবা আলমগীর কবির বাংলাদেশের আর্থিক খাতে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করলেও গত কয়েক বছর ধরে তাঁদের পরিবারকে লক্ষ্য করে নানা অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
রাইয়ানের অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমের অনেক প্রতিবেদনে তথ্য যাচাইয়ের ঘাটতি ছিল এবং এসব প্রতিবেদনের পেছনে একটি বিশেষ মহলের স্বার্থ জড়িত।
রাইয়ান আরও জানান, ২০২১ সালে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বোর্ডে মনোনীত করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও অনুমোদন দেয়। কিন্তু পরে একটি ‘প্রভাবশালী সিন্ডিকেট’ তাঁর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তৈরি করে তাঁকে বোর্ড থেকে অপসারণ করে। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়, মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করা হয় এবং অযৌক্তিক মামলা দেওয়া হয়।
রাইয়ান দাবি করেন, বে লিজিং বা সাউথইস্ট ব্যাংকের ফর্ম–১২ নথিতে তাঁর দায়িত্ব বা সম্পৃক্ততা নেই। অথচ ভুল তথ্য ছড়িয়ে তাঁকে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত দেখানো হয়েছে।
পরিবারের প্রাপ্ত তথ্যের কথা জানিয়ে রাইয়ান জানান, একটি সিন্ডিকেট ব্যাংকের ওপর স্বৈরাচারী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। নিজেদের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো প্রভাবিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো শেয়ারহোল্ডারদের অজান্তেই নেওয়া হচ্ছে।
২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ দখলের ঘটনাও তাঁর কাছে ‘উদ্বেগজনক’ বলে মনে হয়েছে।
রাইয়ান আরও জানান, শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বিবেচনা না করে আগামী পাঁচ বছর লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্যক্তিগত ভোগান্তির কথা তুলে ধরে রাইয়ান জানান, বারবার তাঁর বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ প্রকাশ, ভুয়া মামলা, গণমাধ্যম থেকে হুমকি এবং বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে পারছেন না।
তিনি নিজের যোগ্যতার বিষয়ও উল্লেখ করেন। তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ভ্যালেডিক্টোরিয়ান ও সুম্মা কাম লডে, স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এবং অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস লিস্টে অন্তর্ভুক্ত। তাঁর ইন্টার্নশিপকে অজুহাত করে বোর্ড থেকে সরানোকে ‘হাস্যকর ও অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকদের প্রসঙ্গে রাইয়ান জানান, কিছু গণমাধ্যমে তাঁদের অপসারণকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে তুলে ধরা হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁরা দুদকের করা দুর্নীতির মামলার কারণে অপসারিত হন।
তিনি সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক এমডি সাদেকের অভিযোগগুলোকেও গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের দাবি করেন, যার মধ্যে রয়েছে রেঞ্জ রোভার কেনায় চাপ, ৩০ কোটি টাকা দাবি এবং সহযোগিতা না করায় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত প্রধান দাবির মধ্যে অন্যতম চারটি হলো—যাবতীয় অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত, ব্যাংককে অস্থিতিশীলকারী শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসার জন্য বিদেশযাত্রার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।