ইআরডির প্রতিবেদন
চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই–অক্টোবর) বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি অস্বাভাবিকভাবে কম। পুরোনো প্রকল্পে ঋণছাড় চলমান থাকলেও লক্ষ্যের চেয়ে অনেক পিছিয়ে; প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বেশ মন্থর। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ দ্রুত বাড়ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। আজ রোববার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বৈদেশিক ঋণ, অনুদান, প্রকল্প সহায়তা ও ঋণ পরিশোধের পূর্ণাঙ্গ চিত্র মিলেছে।
ইআরডির চার মাসের প্রতিবেদন থেকে যে সার্বিক চিত্র পাওয়া যায়, তা হলো— প্রকল্প বাস্তবায়ন মন্থর এবং ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়ছে। বড় অংশীদারেরা (রাশিয়া, চীন, জাপান ও ভারত) নতুন করে কোনো চুক্তি না করলেও পুরোনো প্রকল্পে অর্থছাড় অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রতিশ্রুতি অস্বাভাবিকভাবে কম। আর ঋণ পরিশোধের চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে, যা রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ প্রায় ১২০ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে । গত অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল মাত্র ২৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। এখানে সবচেয়ে বড় অবদান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)।
এডিবি মোট ৫৮ কোটি ১৭ লাখ ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা মোট প্রতিশ্রুতির প্রায় ৪৮ শতাংশ। এর বাইরে ইউরোপীয় অংশীদারদের প্রতিশ্রুতি ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার আর এশিয়া, জাপান ইকোনমিক কো-অপারেশন জেইসি ও ফ্রেন্ডশিপ অ্যান্ড ফ্রেমওয়ার্ক উইং ৩২ কোটি ৫৯ কোটি ডলার।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক (আইডিএ) থেকে নতুন প্রতিশ্রুতি এসেছে মাত্র ১ কোটি ২৪ লাখ ডলার, যা অস্বাভাবিকভাবে কম। এর মধ্য দিয়ে আলোচনাধীন প্রকল্পগুলোতে ধীরগতি বা নতুন চুক্তির স্বল্পতার ইঙ্গিত মেলে।
ছাড় বাড়লেও লক্ষ্য থেকে অনেক পিছিয়ে
বিদেশি সহায়তার মোট অর্থছাড় হয়েছে ১৬৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে পাওয়া ১২০ কোটি ২০ লাখ ডলারের চেয়ে বেশি।
কিন্তু সমস্যা হলো—এ বছরের মোট বাজেট লক্ষ্য ছিল ৯২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তার বিপরীতে চার মাসে বাস্তবায়ন মাত্র ১৮ শতাংশ।
উইং-ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমেরিকা ও জাপান থেকে বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৫৮ কোটি ২০ লাখ ডলার, পাওয়া গেছে মাত্র ৮ কোটি ডলার। আর এডিবি থেকে বরাদ্দ ২২০ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বিপরীতে এসেছে ২৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।
তবে ইউরোপ তুলনামূলক ভালো করেছে। বাজেটে ধরা ১৭২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বিপরীতে ছাড় হয়েছে ৪৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। আর বিশ্বব্যাংকের (আইডিএ) ১৯০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বিপরীতে ছাড় ৪০ কোটি ৫২ ডলার। অর্থাৎ বড় অংশীদারদের কাছ থেকে অর্থছাড়ের গতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নেই।
পুরোনো বড় প্রকল্পে রাশিয়া, চীন ও ভারতের অর্থছাড়ে নতুন প্রতিশ্রুতি না এলেও আগের প্রকল্পগুলো থেকে রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপানের অর্থছাড় চলমান রয়েছে। হালনাগাদ হিসাবে দেখা যায়, এই চার মাসে রাশিয়া ৪০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, চীন ১৯ কোটি ৪০ লাখ, ভারত ৮ কোটি ১৮ লাখ ও জাপান ৮ কোটি ডলার ছাড় করেছে।
এই চার দেশ থেকে এ সময়ের মধ্যে কোনো নতুন ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি আসেনি; সবই পুরোনো অবকাঠামো প্রকল্পের ছাড়।
ঋণ পরিশোধ বেড়েছে, রিজার্ভে চাপ বাড়ার ইঙ্গিত
ইআরডির প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই সুদ ও আসল মিলিয়ে বাংলাদেশকে ১৫৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১৪৩ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ প্রায় ১০ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার বৃদ্ধির চাপও বেড়েছে।