ভারত অক্টোবর থেকে চিনি রপ্তানিতে মিলগুলোর ওপর নিষেদ্ধধাজ্ঞা আরোপ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা গত সাত বছরের মধ্যে প্রথম। বৃষ্টির অভাবে আখের ফলন কমে যাওয়া এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দেশটির তিনটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
বিশ্বের চিনির বাজারে ভারতের অনুপস্থিতি নিউইয়র্ক এবং লন্ডনে বেঞ্চমার্ক মূল্য বাড়তে পারে। যা ইতিমধ্যে গত কয়েক বছরের বেশি। এটি বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজারে আরও মুল্যস্ফীতির আশঙ্কা তৈরি করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ‘আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য স্থানীয় চিনির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা এবং উদ্বৃত্ত আখ থেকে ইথানল তৈরি করা। তবে আসন্ন মৌসুমে রপ্তানির জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত চিনি থাকবে না।’
গত মৌসুমে রেকর্ড ১১ দশমিক ১ মিলিয়ন টন বিক্রি করার পর ভারত চলতি মৌসুমে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিলগুলোকে মাত্র ৬ দশমিক ১ মিলিয়ন টন চিনি রপ্তানির অনুমতি দেয়।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে সবচেয়ে বেশি আখ চাষ হয়। এখান থেকেই ভারতের মোট চিনির অর্ধেকেরও বেশি উৎপাদন হয়। তবে সম্প্রতি এসব জেলায় মৌসুমি বৃষ্টিপাত এ পর্যন্ত গড় উৎপাদনের ৫০ শতাংশ কম হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিল্প কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩-২৪ মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ফলে চিনির উৎপাদন কমে হবে এবং এমনকি ২০২৪-২৫ মৌসুমে আখ রোপণও কমে যাবে।
স্থানীয় বাজারে চিনির দাম এই সপ্তাহে প্রায় দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে সরকার মিলগুলোকে আগস্টে অতিরিক্ত ২ লাখ টন বিক্রির জন্য প্ররোচিত করেছে।
অন্য একটি সরকারি সূত্র বলেছে, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি একটি উদ্বেগের বিষয়। সম্প্রতি চিনির দাম বৃদ্ধি রপ্তানির সম্ভাবনাকে নাই করে দিয়েছে।
ভারতে মূল্যস্ফীতি জুলাই মাসে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছিল, যা গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ভারতের চিনি উৎপাদন ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ৩১ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন হতে পারে।
তৃতীয় সরকারী সূত্রটি বলেছে, ‘গত দুই বছরে আমরা মিলগুলোকে প্রচুর পরিমাণে চিনি রপ্তানির অনুমতি দিয়েছি। তবে এখন নিজেদের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং স্থিতিশীল বাজারমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।’
ভারত গত মাসে মোটা সাদা চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিশ্বকে অবাক করেছে। নয়াদিল্লি গত সপ্তাহে পেঁয়াজের রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। মোদি সরকার বছরের শেষ দিকে নির্বাচনের আগে খাদ্যপণ্যর দাম শান্ত করার চেষ্টা করছে বলে ধারণা করছেন অনেক বিশ্লেষকই।
মুম্বাইভিত্তিক ডিলার একটি গ্লোবাল ট্রেড হাউসকে বলেছে, থাইল্যান্ডও চিনি রপ্তানি কমিয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে শুধু ব্রাজিলের পক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারের চিনির চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়বে।