হোম > অর্থনীতি

ঘুরে দাঁড়াতে আস্থা ফেরানো দরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎

অর্থনৈতিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিরা। গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিনিয়োগের শ্লথগতি, সার্বিক আস্থাহীনতা এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতার জেরে দেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ব্যাংকের মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশের বেশি খেলাপি হয়ে যাওয়া এখন অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। এমন কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এখনো অনেকটা ‘চোর ধরার’ মনোভাবের মধ্যেই আবদ্ধ। ফলে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময়কার খাদের কিনারে যাওয়া পরিস্থিতি ঠেকানো গেলেও নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এই সতর্কতামূলক বার্তা উঠে এসেছে গতকাল শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত ‘চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২৫’-এ। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘অর্থনীতির ভবিষ্যৎ পথরেখা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শিরোনামের এই সম্মেলনের আয়োজন করে অর্থ-বাণিজ্যকেন্দ্রিক জাতীয় দৈনিক বণিক বার্তা। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। দ্বিতীয় অধিবেশনের বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রমুখ।

সার্বিক আলোচনায় উঠে আসে, বাড়তি সুদহার, ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, উদ্যোক্তাদের হয়রানি এবং আস্থার ঘাটতি—এগুলো অর্থনীতিকে নিচের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ মাত্র ৬ শতাংশে নেমে আসায় বিনিয়োগের ধারাও অতি ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের বন্ড মার্কেট নেই, স্টক মার্কেটের অবস্থা ভয়ানক করুণ, বিমা খাতেরও অবস্থাও ভালো নয়। সবাই শুধু ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরশীল; যা একটি বড় সমস্যা। আর সেখানে খেলাপি ঋণ আরও বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’

খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংক খাতে নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর প্রতি প্রান্তিকেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। দুই বছর আগে ধারণা ছিল, এই হার ২৫ শতাংশের মতো হবে। তখনকার সরকার বলেছিল, তা ৮ শতাংশ। এখন দেখছি, ইতিমধ্যে ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে।’

খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘ধাপে ধাপে এগোতে হবে। পুরোপুরি উত্তরণে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে।’

দেশের পাঁচ ইসলামি ধরনের দুর্বল ব্যাংককে এক করে নতুন ব্যাংকটি গঠনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত বলে জানান আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক নামে নতুন ব্যাংকটির যাত্রা আগামী সপ্তাহের মধ্যে শুরু করা হতে পারে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক বলেন, ‘দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অনেকটাই চোর ধরা মনোভাবভিত্তিক। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে।

... আস্থা ছাড়া অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। ... দেশে অনেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু দায়বদ্ধতার কাঠামো নেই।’

উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সমস্যা তুলে ধরেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সূচকে আমরা ক্রমেই নিচের দিকে নামছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতির কারণে সুদহার বেড়ে গেছে। এটি বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বেসরকারি খাতে আমরা মাত্র ৬ শতাংশ ঋণ পাচ্ছি। শিল্পায়ন পুরোপুরি স্থবির বলা যায়।’

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘একটি কোম্পানি লাভ করুক বা লোকসান করুক, তাকে কর দিতে হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও এভাবে লোকসানে কর দিতে হয় কি না জানা নেই।’

ব্যাংক খাতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা ফিরেছে মন্তব্য করে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘আগে বোর্ডরুমে বসে ঋণ বিক্রি হতো। এখন নিয়ম মেনে ঋণ অনুমোদন হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের পর বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি।’

রাজনীতিকদের পর্যবেক্ষণ

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে অর্থনীতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ তুলে ধরেন রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকজন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ ছেড়ে পলাতকদের বন্ধ কারখানাগুলো আবার কীভাবে চালু করা যায়, সেটি ভাবা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর যারা ব্যাংক লুট করেছে, দেশে লুটপাট করেছে, চুরি করেছে—তাদের ধরেন, শাস্তি দেন। কিন্তু তাদের যে শিল্পকারখানা আছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ কাজ করছে ... আলোচনায় এসেছে, ১৪ লাখ মানুষ কর্ম হারিয়েছে, তারা যাবে কোথায়? আমরা এই বেকারত্ব সৃষ্টি করছি কেন?’

ব্যবসায়ীদের বিষয়ে ধারণা পাল্টানোর পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চোর ধরার চিন্তা থেকে বেরিয়ে বিশ্বাসের জায়গায় আসতে হবে। তাকে যদি বিশ্বাস না-ই করি, তাহলে ব্যবসা করে তারা দেশের জন্য কী করবেন?’

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অর্থনীতিতে বিভিন্ন সরকারি মারপ্যাঁচ, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এবং দুর্বৃত্তপনা স্বাধীনতার পর থেকে এখনো রয়ে গেছে। একজন উদ্যোক্তা যখন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য জমি কিনতে যান, তখন হাজারো সমস্যায় পড়েন। ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্র বিভিন্নভাবে এই দুর্বৃত্তায়নে সহায়তা করে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল একটি গোষ্ঠীর কাছে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, অর্থনীতি গণতন্ত্রের অংশ এবং এটি জনকল্যাণে ব্যবহৃত হতে হবে। অর্থনীতি যত দিন শুধু একটি গোষ্ঠীর হাতে সীমাবদ্ধ থাকবে, তত দিন সাধারণ মানুষ এর সুফল পাবে না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বিগত সরকার দেশের অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল, যেখানে মাফিয়া ও লুটেরা শ্রেণি ক্ষমতায় ছিল। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের অংশ হলেও এর মূলে ছিল জনগণের সার্বিক উন্নতির আকাঙ্ক্ষা। বর্তমানে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো—কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মহানগরগুলোর উঠতি মধ্যবিত্তের জীবন-জীবিকার সুরাহা। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মৌলিক সেবার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি রোধ ছাড়া কোনো উন্নয়ন টেকসই হবে না।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল আরও এক মাস

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ফুটি কার্পাসে নতুন সম্ভাবনা

১ জানুয়ারি কার্যকর: দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল বাড়ল ৫ শতাংশ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর: ফসল ব্যবস্থাপনায় উত্তরের চার জেলায় কৃষির নতুন প্রকল্প

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যেন গুদামঘর

কক্সবাজারে এমজিআইয়ের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স

ষষ্ঠবারের মতো এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল ডিবিএল গ্রুপ

আরও কমেছে পেঁয়াজ আলু ও সবজির দাম

জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের ই-রিটার্ন দাখিলে এনবিআরের হেল্প ডেস্ক

আকাশপথে পণ্য পরিবহনে অফডক চান ব্যবসায়ীরা