আমনের ভরা মৌসুম শুরু হতে আর বাকি মাত্র ১০-১৫ দিন। ইতিমধ্যে কোনো কোনো অঞ্চলে রোপা আমন ধান মাঠ থেকে উঠতে শুরু করেছে। কিছু চাল আমদানিও করা হচ্ছে। এই দুইয়ে মিলে চালের বাজারে স্বস্তির আভাস মিলছে। নতুন চাল বাজারে না এলেও পুরোনো কোনো কোনো ধরনের চালের দাম কমেছে। জিরা, পাইজাম, গুটি স্বর্ণাসহ কয়েক ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। দাম এর আগের সপ্তাহেও ১-২ টাকা করে কমেছিল। সে হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কেজিপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে মোটের ওপর এখনো দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট মানিকনগরসহ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে চালের দরের এমন তথ্য পাওয়া যায়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগের আমদানি করা চালের মজুত এখনো রয়েছে। এ ছাড়া আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে নতুন চাল বাজারে আসা শুরু হবে। এমন অবস্থায় মজুত চাল দ্রুত বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করছেন মিলমালিক ও আমদানিকারকেরা। এতে দাম কমতে শুরু করেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে গতকাল শম্পা কাটারিও নাজিরশাইলসহ বিভিন্ন সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৭৮-৮০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৮০-৮২ টাকা ছিল। এ ছাড়া জিরাশাইল, জিরা নাজির, মিনিকেটসহ বিভিন্ন জাতের সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৬ টাকায়। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এই চালগুলোর দামও গত এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। তবে মোটা ধরনের ব্রি২৮ চালের দাম স্থির রয়েছে আগের মতোই কেজিপ্রতি ৫৮-৬০ টাকায়।
পাইজাম, গুটি স্বর্ণা ও কিছু মোটা জাতের চালের দামও কমেছে কিছুটা। এসব চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকা কেজি। গত সপ্তাহ পর্যন্ত তা ছিল ৫২-৫৮ টাকা কেজি।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে মাঝারি ও মোটা চালের দাম ১-২ টাকা কমেছে। মাঝারি মানের চাল গতকাল বিভিন্ন খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫৮-৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৭০ টাকা কেজি। টিসিবির তথ্য বলছে, মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪-৬০ টাকা কেজি, যা কয়েক দিন আগে ছিল ৫৫-৬০ টাকা।
মানিকনগর বাজারের চাল ব্যবসায়ী মরিয়ম স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, বাজারে এখনো নতুন চাল না উঠলেও দাম কমতে শুরু করেছে। অনেক ধরনের চালের দামই কেজিপ্রতি ২-১ টাকা কমেছে।
আমন মৌসুমে সাধারণত পাইজাম, জিরা, স্বর্ণা, গুটি চাল বেশি উৎপাদন হয়। ফলে এসব চালের দামই বেশি কমবে বলে জানান ব্যবসায়ী ইউসুফ।
বাজারের তথ্য বলছে, চলতি বছর দেশে বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও গত জুন থেকে বাড়তে শুরু করে দাম। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোটা, মাঝারি ও সরু সব ধরনের চালের দাম কেজিতে প্রায় ৮-১০ টাকা বেড়েছিল। অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দাম সেটা থাকলেও দুই সপ্তাহ ধরে কমছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির চেয়ে আমন মৌসুমের ধান উঠতেই দামের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কাউসার আলম বাবু বলেন, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এক সপ্তাহ ধরে রোপা আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে হয়তো আরও অনেক জেলায় ধান কাটা শুরু হবে। এর মধ্যে আবার গত বুধবার নতুন করে বেসরকারি পর্যায়ে আরও ১ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর আগে বেসরকারি পর্যায়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই চালও বাজারে রয়েছে। সব মিলিয়ে চালের দাম কমছে।
এদিকে পাইকারি বাজারে গত ১০-১৫ দিনে প্রতি কেজি চালের দাম ৪-৫ টাকা কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। পাইকারি বাজারে গতকাল গুটি স্বর্ণাসহ তুলনামূলক মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫২ টাকা কেজি করে। জিরাশাইল, নাজিরশাইল, শম্পা কাটারি ও মিনিকেটসহ কিছুটা সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৬২-৮০ টাকা কেজিতে। ব্রি২৮ ও ২৯সহ মাঝারি মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪-৫৮ টাকা কেজি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুলাই থেকে সর্বশেষ ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮০ টন চাল আমদানি করা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৭ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে বোরো ও আমন মৌসুম মিলিয়ে উৎপাদন হয় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টন। এর মধ্যে আমন মৌসুমে উৎপাদন হয় ১ কোটি ৬৫ লাখের কিছু বেশি। তারপরও বিভিন্ন সময়ে চালের দাম বাড়ে। দাম বাড়াসহ নানা কারণে চাল আমদানি করা হয়।
ট্যারিফ কমিশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় দেশে চালের দাম বেড়েছিল। দীর্ঘ মেয়াদে শুল্কছাড়ে চাল আমদানি হতে থাকলে স্থানীয় কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় কমাতে কাঁচামাল সহজলভ্য করা ও নীতি-সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।