লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল (এলসিটি) পিপিপি প্রকল্পে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি সই করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) এবং ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত চুক্তি সই হবে। চুক্তির আওতায় এপিএম টার্মিনালস বাংলাদেশে ৮০ কোটি মার্কিন ডলার কিংবা তার বেশি বিনিয়োগ করবে; যা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইউরোপীয় ইক্যুইটি বিনিয়োগ।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (বিডা) আশিক চৌধুরী এসব কথা জানান। তিনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (মিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কাঠামোর আওতায় এই টার্মিনাল নির্মাণ, অর্থায়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে এপিএম টার্মিনালস, তবে মালিকানা থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে। প্রকল্পটি হলে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়বে। সরকার ও সিপিএর আয়, পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ ১১ ধরনের সুবিধা বাড়বে।
বেজার চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের বন্দর খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। লালদিয়া টার্মিনাল প্রকল্পটি শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি বাংলাদেশের লজিস্টিকস খাতকে ফিউচার-রেডি করে তুলবে; যা আমাদের রপ্তানি, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করবে। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের পিপিপি খাত একটি বৈশ্বিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এটি ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ, পরিবহন ও সামাজিক অবকাঠামো খাতে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে বাংলাদেশের বন্দর খাত শুধু আধুনিকায়নই হবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক লজিস্টিক হাবে পরিণত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক গ্রুপ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শিপিং প্রতিষ্ঠান, যার সহযোগী এপিএম টার্মিনালস বর্তমানে ৩৩টি দেশে ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি ইউরোপ, চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশে দীর্ঘদিন ধরে সফলভাবে বন্দর পরিচালনা করছে।
আশিক চৌধুরী বলেন, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল হবে দেশের প্রথম গ্রিন ও স্মার্ট পোর্ট, যা বর্তমান সক্ষমতার দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ধারণ করতে পারবে এবং ২৪ ঘণ্টা নাইট নেভিগেশন সুবিধাসহ পরিচালিত হবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে গতি আসবে, কমবে পরিবহন ব্যয় এবং বৈশ্বিক শিপিং সংযোগ আরও জোরদার হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টার্মিনালটি ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে বছরে ৮ লক্ষাধিক টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে, যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি।
প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি ৫০০-৭০০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার মানুষ কাজের সুযোগ পাবেন; বিশেষ করে ট্রাকিং, স্টোরেজ, লজিস্টিকস ও স্থানীয় এসএমই খাতে। রাজস্ব ভাগাভাগি ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়ায় সিপিএ প্রতি কনটেইনারে নির্দিষ্ট হারে আয় পাবে, পাশাপাশি কর ও শুল্কের মাধ্যমে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।
বন্দরটিতে জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার ও জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে কার্বন নির্গমন কমবে এবং বাংলাদেশের প্যারিস চুক্তির (এনডিসি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান চৌধুরী আশিক।