ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের ১২ একর ১৬ শতাংশ জমি ক্রোক ও একটি ব্যাংক হিসেবে থাকা ৫৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫১ টাকা অবরুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. সাব্বির ফয়েজ এই আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয় বলে জানান দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।
দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন জমি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ চেয়ে আবেদন করেন।
দুদকের আবেদন অনুযায়ী গাজীপুর জেলার টঙ্গী উপজেলার গোবিন্দপুর মৌজার ছয়টি দলিলের এই ১২ একর ১৬ শতাংশ জমি ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে আই এফআইসি ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে থাকা ৫৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫১ টাকা অবরুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, সালমান এফ রহমান ও তাঁর সহযোগীরা প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের কাছ থেকে হাজারো কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংককে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার এবং হাজারো কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগও রয়েছে।
তদন্ত চলাকালে সালমানের জমি ও ব্যাংকে থাকা অর্থের বিষয়ে সন্ধান পাওয়া গেছে। তদন্তকালে আরও জানা গেছে, সালমান এফ রহমান এই স্থাবর সম্পদ ও অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর বিক্রি ও স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, যদি এই প্রচেষ্টা সফল হয়, তাহলে তদন্ত শেষে মামলা দায়ের, আদালতে চার্জশিট দাখিল, বিচার কার্যক্রম পরিচালনা এবং সরকারের পক্ষে অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার মতো কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তাই স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা একান্ত আবশ্যক।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সালমান এফ রহমান ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্টদের ৩৫৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন একই আদালত। গত ১০ মার্চ সালমান এফ রহমানের লন্ডনের স্থাবর সম্পদ ক্রোক সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানির শেয়ার ও লন্ডনের বার্কলেস ব্যাংকের দুটি অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই দিন সালমান ও তাঁর স্ত্রী, ছেলে, ভাই ও ভাতিজার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এ ছাড়া গত ৭ মে সালমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য, বেক্সিমকো গ্রুপ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এবং তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্টদের সব কোম্পানির শেয়ার, বিও হিসাব ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই দিন বেক্সিমকো নাম সংবলিত ৩৩টি কোম্পানিসহ মোট ৪৭টি কোম্পানির শেয়ার, বেক্সিমকো গ্রুপের ২৮টি কোম্পানির বিও হিসাব ও সালমান এফ রহমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যক্তির ৭৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমানকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর তাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন ঘটনায় দায়ের করা হত্যা ও হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় এবং তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বিভিন্ন মামলায় তাঁকে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে।