হোম > অর্থনীতি

দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে চার হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় করা হয়েছে: কৃষিসচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎

অর্থ ব্যয়ে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে কৃষি খাতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে চার দিনব্যাপী ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্ভোধনী সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিসচিব এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) এ সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রথম দিনের সেমিনারের শিরোনাম ছিল—‘কৃষির রূপান্তর: দেশীয় উপযোগী কৃষিযন্ত্র ও কৃষিপণ্য রপ্তানি চ্যালেঞ্জ’। বিএজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু খালিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।

কৃষিসচিব বলেন, ‘অর্থ ব্যয় নিয়ে অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যে কানাঘুষা আছে, সেগুলো কিছুটা হলেও দূর করতে পেরেছি। আমরা এমনভাবে পরিকল্পনা নিচ্ছি, যাতে সারের খরচে বছরে দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। ইতিমধ্যে সারে চলতি বছরে এক হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি।’

ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের ৬০০ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। কেবল ২০ কোটি টাকা দিয়ে প্রকল্পটি শেষ করা হয়েছে। প্রকল্পে দুর্নীতি কমাতে সার্বিক কৃষিতে বরাদ্দের সাড়ে ছয় হাজারের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এভাবে গত বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে।’

কৃষির জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সচিব বলেন, দেশের কৃষি খাতে সামগ্রিক উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ নিশ্চিত করতে আগামী ২৫ বছরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ পরিকল্পনার চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা হবে।

কৃষিসচিব আরও বলেন, ‘সবজির দাম ১০০ টাকা হলেও সেটি সবাই স্বাভাবিকভাবেই নেয়; কিন্তু পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হলেই সেটা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়। কৃষককে কি পেঁয়াজের দাম দিতে হবে না? আগামী তিন বছরের মধ্যে আদা ও পেঁয়াজে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই।’

একই সঙ্গে আলুর দাম না পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যা করার ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করে এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘আলুর দাম কমে গেছে, আমার খুব কষ্ট হয়।’

বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, ‘কৃষক ও কৃষির স্বার্থ সুরক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন। প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়ে স্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল থাকতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো—কৃষিকে টেকসই করতে রাজনীতির সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা। কৃষির রূপান্তর টেকসই করতে উন্নত প্রযুক্তি ও কৃষকবান্ধব নীতি প্রণয়ন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদ প্রকল্পের পরিচালক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ধারায় ‘‘মেড ইন বাংলাদেশ’’ বাস্তবায়নে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। শ্রীলঙ্কা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় স্থানীয়ভাবে মানসম্পন্ন কৃষিযন্ত্র উৎপাদন এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে, যা দেশের কৃষিতে সময় সাশ্রয়, ব্যয় হ্রাস ও নতুন শিল্প তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখবে। দেশের কৃষিযন্ত্র বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়—এমন পরিস্থিতি পরিবর্তন করে স্থানীয়ভাবে মানসম্পন্ন যন্ত্র তৈরির সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ব্রি বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে দেশের মাটিতে প্রযুক্তি বানানোর সক্ষমতা অর্জনই এখন মূল লক্ষ্য।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্রির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দুরুল হুদা বলেন, দেশে আধুনিক কৃষিযন্ত্র উৎপাদনের সবচেয়ে বড় বাধা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের অদক্ষতা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা। কম্বাইন হারভেস্টার ও রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মতো অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্র ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ হিসেবে তৈরি হওয়ার পথে বড় বাধা তৈরি হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দেশে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি, যেখানে ইঞ্জিন তৈরি হয়। অতীতে যেগুলো ছিল—মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, ডিজেল প্ল্যান্ট বা চট্টগ্রাম স্টিল মিল—সেগুলো পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় শিল্পভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। বেসরকারি খাতেও সক্ষমতা বাড়েনি। ফলে আধুনিক কৃষিযন্ত্র, বিশেষত কম্বাইন হারভেস্টার ও রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার উৎপাদনে দেশ পিছিয়ে আছে।

আরও এক বিশেষ অতিথি পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, শুধু উৎপাদন নয়, কৃষিকে একটি লাভজনক, শিক্ষিত ও ডিগনিফায়েড পেশা হিসেবে গড়ে তোলাই এখন প্রধান উদ্দেশ্য। পিকেএসএফ মূলত সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে কাজ করছে। বর্তমান সময়ে ওই সংস্থাগুলো বছরে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা মাঠপর্যায়ে বিতরণ করছে, যার প্রায় ৪০ শতাংশই কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। বাংলাদেশের মোট কৃষি অর্থায়নের প্রায় ৮৫ শতাংশ এমএফআই (ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠান) সেক্টর দিয়ে হচ্ছে, তাই ক্ষেত্রটি এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আরও এক বিশেষ অতিথি ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ব্রির মূল ম্যান্ডেট হচ্ছে ধানভিত্তিক সব ধরনের গবেষণা এগিয়ে নেওয়া। দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই গবেষণাকাজ কয়েক দশক ধরে অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশের প্রধান চাহিদা ছিল খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সে সময় প্রতি হেক্টরে দেড় থেকে দুই টন ধান উৎপাদন হতো, সেখানে এখন আধুনিক জাত ও প্রযুক্তির কারণে অনেক জায়গায় ৮ থেকে ১০ টন পর্যন্ত উৎপাদন হচ্ছে। হাইব্রিড ধানের জাত উদ্ভাবনে জোর দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে ধানের গড় ফলন হেক্টরে ১০ টনের ওপরে যাবে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, বিশ্ব অ্যাগ্রো প্রসেসিং বাজার ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের হলেও বাংলাদেশের অংশ মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার। এখানে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তবে খাতে ভ্যারাইটি ও মানের ঘাটতি আছে, ৪০০ প্রতিষ্ঠান থাকলেও সবাই উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ১৮টি দপ্তরের অনুমতির জটিলতা সময় ও খরচ বাড়ায়, তাই ওয়ান স্টপ সার্ভিস ও কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং জরুরি। কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবের সংকট রয়েছে, অনেক পরীক্ষা বিদেশে করাতে হয় এবং বিএসটিআইয়ের মান সব দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে গ্রামপর্যায় থেকেই কাজ শুরু করার তাগিদ দেন তিনি।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, গত পাঁচ বছরে আম রপ্তানি বেড়েছে তিন গুণ। আর এই সময়ে আম আমদানি শূন্যে নেমেছে। বর্তমানে ৩৮টি দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আম রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। আম রপ্তানিতে ইউরোপের বাজার দখলের সুযোগ রয়েছে। তবে পরিবহন ও বিমানভাড়ার কারণে সেভাবে আম রপ্তানি বাড়ানো যাচ্ছে না। অনেক সময় বেশি ভাড়া দিলেও বিমানে জায়গা পাওয়া যায় না। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিমানে নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ থাকা উচিত।

বিএজেএফের চার দিনের এ সম্মেলনে কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ ছাড়া সহযোগিতায় রয়েছে এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসেস, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, লাল তীর সিডস লিমিটেড, ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন—বাংলাদেশ ব্র্যাঞ্চ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল আরও এক মাস

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ফুটি কার্পাসে নতুন সম্ভাবনা

১ জানুয়ারি কার্যকর: দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল বাড়ল ৫ শতাংশ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর: ফসল ব্যবস্থাপনায় উত্তরের চার জেলায় কৃষির নতুন প্রকল্প

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যেন গুদামঘর

কক্সবাজারে এমজিআইয়ের বার্ষিক সেলস কনফারেন্স

ষষ্ঠবারের মতো এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল ডিবিএল গ্রুপ

আরও কমেছে পেঁয়াজ আলু ও সবজির দাম

জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের ই-রিটার্ন দাখিলে এনবিআরের হেল্প ডেস্ক

আকাশপথে পণ্য পরিবহনে অফডক চান ব্যবসায়ীরা