কোভিড বৈশ্বিক মহামারি সারা বিশ্বেই মানুষের জীবনযাত্রার মানে ভয়াবহ রকম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্তের সংখ্যা ২০২০ সালে মহামারির আগের অনুমানের চেয়ে ৫ কোটি ৪০ লাখ কমেছে। আবার এই সময়ে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে অনুমিত সংখ্যার চেয়ে ১৩ কোটি ১০ লাখ বেশি এখন।
শতাংশের হিসাবে ২০২০ সালে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৭ ভাগ মানুষকে মধ্যবিত্ত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ, বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষই নিম্ন আয়ের (৫১%) বা গরিব (১০%)। আর উচ্চবিত্তের সংখ্যা মোট সংখ্যার ৭ শতাংশ এবং উচ্চ-মধ্য আয়ের জীবনযাপন করছে প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ।
বাংলাদেশের অবস্থা কী?
সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ডেটা ল্যাবের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর একটি পরিবারে প্রতিদিন ১১ থেকে ১১০ ডলার খরচ করেছে—এমন মানুষের সংখ্যা ৩৭৫ কোটি ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ বেড়ে ২ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এ অঙ্ক কিন্তু বার্ষিক হিসাবে গণনা করা হয়। আর দারিদ্র্যের হার কমে ২০ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে।
এ জন্য রয়েছে আলাদা ক্যালকুলেটর, যা ব্যবহার করে খুব সহজেই বের করা যাবে, আপনি কোনো ক্যাটাগরিতে পড়েন। এখানে ২০২০ সালে আপনার পারিবারিক আয়; অর্থাৎ, দৈনিক, মাসিক বা বার্ষিক বিবেচনায় পরিবারের সব সদস্যের মোট আয়ের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করেই এই ক্যালকুলেটর থেকে বের করা যাবে আপনি আপনার দেশে কোন অর্থনৈতিক শ্রেণিতে পড়েছেন। এই হিসাব বের করার জন্য আয়ের পাশাপাশি পরিবারের মোট সদস্যের সংখ্যাও উল্লেখ করতে হবে।
পারিবারিক আয়ের ভিত্তিতে ২০১১ সালের বাজার অনুযায়ী ক্রয়ক্ষমতা (পিপিপি) নির্ধারণ করা হয়। পণ্য ও সেবার মূল্য সংশ্লিষ্ট দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মুদ্রার বিনিময় হার অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব করা হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালে বৈশ্বিক এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আয় বণ্টনও হিসাবে নেওয়া হয়। যেমন, বাংলাদেশের কারও ক্ষেত্রে এই ক্যালকুলেটর ২০২০ সালে বৈশ্বিক আয় বণ্টন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবস্থান নির্ধারণ করে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের আয় বণ্টনের হিসাবেও ওই ব্যক্তির অবস্থান নির্ধারণে সহায়তা করে এই ক্যালকুলেটর।
পিউ রিসার্চ সেন্টার মধ্যবিত্ত ও অন্যান্য ক্যাটাগরির জন্য একটি মান নির্ধারণ করেছে। যেমন, চার সদস্যের একটি পরিবারের দৈনিক আয় যদি ১০ ডলার ১ সেন্ট থেকে ২০ ডলারের মধ্যে হয়, তবে তারা মধ্যবিত্ত। এ হিসাবে এই শ্রেণির মানুষের বার্ষিক আয় ১৪ হাজার ৬০০ থেকে ২৯ হাজার ২০০ ডলার। আর বাকি শ্রেণিগুলোর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে—দৈনিক ২ ডলার বা এর কম আয় হলে দরিদ্র, ২ ডলার ১ সেন্ট থেকে ১০ ডলারের মধ্যে আয় হলে নিম্ন আয়ের, ২০ ডলার ১ সেন্ট থেকে ৫০ ডলার হলে উচ্চমধ্যবিত্ত এবং ৫০ ডলারের ওপর হলে তাকে উচ্চবিত্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। হিসাবটি করা হয়েছে ২০১১ সালের ক্রয়ক্ষমতার (পিপিপি) মানের ভিত্তিতে। এখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার দেশ বা অঞ্চলের ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) ব্যবহার করে ২০১১ ও ২০২০ সালের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হিসাব বের করা হয়।
ক্যালকুলেটরটির সীমাবদ্ধতা হলো—এটি শুধু ১৮৯টি দেশ ও অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ ছাড়া ২০২০ সালের আয় বণ্টন হিসাবের জন্য যথেষ্ট উপাত্তও পিউ রিসার্চ সেন্টারের কাছে নেই। অবশ্য ২০১১ সালে ১১১টি দেশের উপাত্তের ভিত্তিতে পিউ রিসার্চ সেন্টার এ আয় বণ্টন হিসাব করেছিল।
নিচের ক্যালকুলেটরে হিসাব করে বের করুন আপনার অবস্থান: