বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সংকটে থাকা একীভূত পাঁচটি ব্যাংকের ভুক্তভোগী আমানতকারীরা অবিলম্বে টাকা ফেরতের দাবি করেছেন। তাঁরা সরকারের পালাবদলের পর একের পর এক প্রতিশ্রুতি পেয়েও আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টালবাহানা বন্ধ করে টাকা ফেরতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। দ্রুত টাকা ফেরত না দিলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন আমানতকারীরা। টাকা ফেরত দেওয়ার সুনির্দিষ্ট ডেডলাইনসহ প্রজ্ঞাপন (গেজেট) জারি করতে হবে। আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের আমানতকারীদের মুদারাবাসহ শতভাগ আমানত ফেরতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক লিখিত রোডম্যাপ প্রকাশ না করলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা বিভিন্ন দাবিসহ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এক্সিম ব্যাংকের সাভার শাখার গ্রাহক ফরিদা বেগম বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের শেষ কোথায়। আমাদের টাকা ফিরিয়ে দেন। এত নাটক করেন কেন? আপনাদের মুখের কথা আর বিশ্বাস করি না। টাকা কবে দেবেন, গেজেট আকারে প্রকাশ করেন। তা নাহলে সপরিবারে বিষ খেয়ে মারা যাব।’
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভুক্তভোগী গ্রাহক ও প্রবাসী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে দেশের বাইরে থাকি। দীর্ঘ সময়ের কষ্টের জমানো টাকা আমি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে জমা রাখি। কিন্ত এখন সেই জমানো টাকা দিতে নানা বাহানা শুরু করেছে। আমি এত কিছু বুঝি না, আমার টাকা ফেরত দিতে হবে। বারবার প্রতিশ্রুতি আর চাই না। টালবাহানা বন্ধ হবে কবে? আগামী সপ্তাহের শেষ কোথায়?’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট পাঁচটি ব্যাংকের গ্রাহকেরা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তাঁদের কষ্টার্জিত আমানতের অর্থ উত্তোলনে ব্যর্থ হচ্ছেন। সর্বশেষ পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা দিলেও আমানত ফেরতের বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমান নয়।
তাঁরা আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর একাধিকবার গণমাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে না। গত দুই মাসে বিভিন্ন সময় ‘চলতি মাসে’, ‘আগামী সপ্তাহে’ বা ‘খুব শিগগির’ টাকা পাওয়া যাবে—এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও ব্যাংক শাখাগুলোতে গেলে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা ইতিবাচক সাড়া মিলছে না।
রিপন মিয়া নামের আরও একজন আমানতকারী বলেন, ‘দিনের পর দিন আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। আমার বাবা অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছি না। ব্যাংকে টাকা রেখে কী অপরাধ করেছি?’
তাঁদের দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে—২ লাখ টাকা আমানত সুরক্ষা ছাড়া আমানতের সব টাকা ফেরতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একটি লিখিত আকারে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। নির্দিষ্ট তারিখের মাধ্যমে ইনস্যুরেন্স আমানত সুরক্ষার ২ লাখ টাকা অবিলম্বে ফেরত দেওয়া শুরু করতে হবে। সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের সব হিসাবের আমানতকারীদের মুদারাবাসহ শতভাগ আমানত ফেরতের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের সব লেনদেন দ্রুত স্বাভাবিক করতে হবে।