আয়কর বিবরণীতে মোট আয়ের ২০ শতাংশেরও বেশি অংশের তথ্য গোপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের অতিধনীরা। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সেবা (আইআরএস) বিভাগে দেওয়া আয়কর বিবরণীতে তারা কৌশলে সম্পদের তথ্য গোপন করেন। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে করফাঁকির পরিমান ধারণার চেয়ে অনেক বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈবচয়নে সাধারণ নিরীক্ষার মাধ্যমেই ধনীদের কর ফাঁকি ধরতে পারার কথা। কিন্তু গবেষকরা অনুসন্ধানে দেখেছেন, সুচতুর কৌশল অবলম্বন করায় আইআরএস এই ফাঁকির বিষয়টি ধরতেই পারছে না। বিশেষ করে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসা এবং বিদেশে অবস্থিত ব্যবসা অবকাঠামোর ব্যাপারে তথ্য গোপনের ঘটনা বেশি ঘটে।
বেতনভাতার মতো বিষয়গুলোতে ফাঁকিজুকি সাধারণ নিরীক্ষার মাধ্যমেই খুব সহজে ধরতে পারে আইআরএস। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যবসার মুনাফা এবং জটিল বিনিয়োগ অংশীদারিত্বের বিষয়গুলোর ফাঁকফোকর শনাক্ত করা খুব কঠিন। আর এই সুযোগটিই নেন ধনীরা।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের অতিধনী এই এক শতাংশ জনগণ কৌশলে যে পরিমান করফাঁকি দেয় তাতে ফেডারেল সরকার প্রতি বছর ১৭৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব বঞ্চিত হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, অতিধনীদের গোপন আয়ের পরিমান অনেক বেশি। এর মানে হলো, আয় ও সম্পদের প্রকৃত বৈষম্য বিভিন্ন গবেষণায় বেরিয়ে আসা পরিমানের চেয়ে ঢের বেশি।
গবেষকরা এই ধরনের ফাঁকি রোধ করতে নিরীক্ষা ব্যবস্থায় অতিরিক্ত কিছু টুল অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে পানামা পেপারের মতো হুইসেলব্লোয়ার এবং আরো বিশেষায়িত নিরীক্ষা পদ্ধতি অবলম্বনের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন আইআরএসের দুই জন গবেষক এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স, কারনেগি মেলন ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট বারকেলের তিন জন অধ্যাপক।
নতুন গবেষণার বিষয়ে আইআরএস কমিশনার চাক রেটিং বলেছেন, কংগ্রেসের প্যানেলকে গত সপ্তাহে তিনি জানিয়েছেন যে অতিধনীদের সম্পদ নিরীক্ষার বিষয়টি এক দশক ধরেই সমস্যার মুখে রয়েছে। এর কারণ হলো এই কাজটি করার মতো উপযুক্ত কর্মী কমেছে।
তিনি বলেন, ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত আমরা ১৫ হাজার কর্মী হারিয়েছি।
গত শুক্রবার প্রকাশিত ফেডারেল রিজার্ভের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এক শতাংশ অতিধনীর নিট সম্পদ ২০২০ সালে প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলার বেড়েছে। এটি দেশের নতুন সৃষ্ট মোট সম্পদের এক তৃতীয়াংশ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অতিদরিদ্র অর্ধেক জনসংখ্যার মোট সম্পদের পরিমান বেড়েছে ৪৭১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের মাত্র ৪ শতাংশ বেশি।
সূত্র: ব্লুমবার্গ