পিআরআইয়ের গোলটেবিলে বিসিআই সভাপতি
দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ সুদে ঋণ, রেকর্ড খেলাপি ঋণ, সংকুচিত বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের ঘাটতি দেশের অর্থনীতিতে গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। পাশাপাশি শিল্প ও কারখানায় চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অর্থনীতির রক্তক্ষরণ আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। তিনি সতর্ক করেছেন, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বড় দুর্দিনের মুখে পড়বে অথচ এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের চিৎকার ও বারবার সতর্কবার্তা উপেক্ষা করছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘মাসিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক গোলটেবিল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। বক্তব্য দেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ড. এ কে এম আবিদুর রহমান এবং বিজিএমইএ প্রতিনিধি ইয়াকুব বিন ইসলাম।
চৌধুরী পারভেজ বলেন, সরকার জ্বালানির দাম বাড়িয়েও সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। ২০২২ সালের পর থেকে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকার জনসংখ্যা এখন সাড়ে তিন কোটি হলেও শহরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথাযথ পরিকল্পনা নেই। তিনি উল্লেখ করেন, ১৭ শতাংশ খেলাপি ঋণের সময়ে আইএমএফ বাংলাদেশকে মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ বলেছিল; বর্তমানে খেলাপি ঋণ ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা ঋণের ব্যয় আরও বাড়াবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব এবং জটিল বিনিয়োগ পরিবেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখনো আকৃষ্ট হচ্ছেন না। দেশে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী নীতি-কাঠামো, জ্বালানি খাতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা জরুরি।
পিআরআই চেয়ারম্যান বলেন, অর্থনীতির গতি কিছুটা কমলেও স্থিতিশীলতা এসেছে। রপ্তানিতে ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় অবস্থান ভালো হলেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য আরও উদারনীতি প্রয়োজন। তিনি জানান, দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় প্রায় ৬.৪ ট্রিলিয়ন টাকার অনাদায়ী ঋণ ঝুঁকি সৃষ্টি করছে, যা উচ্চ সুদহার ও ঋণের প্রবাহ কমানোর কারণ হিসেবে কাজ করছে।
প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, কঠিন পদক্ষেপ না নিলে উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে মধ্যমেয়াদি ঝুঁকি সৃষ্টি হবে, যা দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্ভাবনা সংকুচিত করবে। আন্তর্জাতিক স্ট্রেসড অ্যাসেট ফান্ডের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ব্যাংকগুলো দ্রুত অনাদায়ী ঋণ শিট থেকে সরাতে সক্ষম হবে।
গবেষক ড. ওয়াটসল বিন সাদান সতর্ক করেছেন, সৎ করদাতারা সর্বাধিক চাপের মুখে পড়ছেন। করনীতিতে ন্যায়বিচার না থাকলে দেশের ৮৫ শতাংশ অর্থনীতি অনানুষ্ঠানিক খাতে থাকবে।
বিসিআই সভাপতি ও বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, অর্থনীতির সুস্থতা ফিরিয়ে আনার জন্য শক্তিশালী নীতি, কাঠামোগত সংস্কার এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ জরুরি। অন্যথায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।